ছন্দে শুধু কান রাখো
অজিত দত্ত
বিষয়বস্তুঃ কবিতায় কবি বোঝাতে চেয়েছেন প্রকৃতির পরতে পরতে রয়েছে ছন্দময়তার আদর্শ উদাহরণ। ছন্দের উপর ভর দিয়ে কবিতা যেমন এগিয়ে চলে, তেমনি এই মহাবিশ্বের সব কিছু ছন্দময়তার বন্ধনে বাধা। বিশ্বময় ছড়ানো এই ছন্দকে সঠিক ভাবে অনুভব করতে গেলে , মন্দ কোথায় কান দেওয়া চলবে না। ঝগড়া- বিবাদ ভুলে গিয়ে মনকে সজাগ করে না তুললে ছন্দকে যথার্থ শোনা যায় না। ঝরবাদল, জ্যোৎস্না পাখির কুজন, ঝিঁঝিঁর ডাক ও নদীর স্রোতেই নয়, ছন্দ রয়েছে গাড়ির চাকা, রেলের চলাচল ও নৌকা জাহাজের পারাপারেও।ছন্দে চলার আর একটি উদাহরণ হল ঘড়ির কাটার চলাচল ও দিন রাত হওয়া। এই সব ছন্দ যারা কান পেতে শুনবে তারা জগতকে ছন্দ সুরের সংকেতে চিনতে পারবে। তখন জীবন হয়ে উঠবে পদ্যময়।
অনধিক দুটি বাক্যে নিন্মলিখিত প্রশগুলির উত্তর দাওঃ
১১ “ মন্দ কথায় কান দিয়ো না”- মন্দ কথার প্রতি কবির কীরূপ মনোভাব কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে?
উঃমন্দকথা যদি মনে দ্বন্দ্ব বা বিবাদ তৈরি হয় তাহলে ছন্দ শোনা যায় না। কবি মনে করেন মন্দ কথা প্রকৃত ছন্দের সুর শুনতে বাধা দেয়। তাই, মন্দ কথার প্রতি কবি বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
১.২ “কেউ লেখেনি আর কোথাও”—কোন্ লেখার কথা এখানে বলা হয়েছে?
উঃনদীর স্রোতের চলাচলে যে ছন্দ লুকিয়ে আছে সেই ছন্দ অন্য কারো নেই। প্রকৃতির এই অতুলনীয় ছন্দ মন দিয়ে শুনলে বোঝা যাবে যে ইতিপূর্বে এই ছন্দময় ছড়া আর কেউ কোথাও লেখে নি।
১.৩ “চিনবে তারা ভুবনটাকে”- কারা কীভাবে ভুবনটাকে চিনবে?
উঃ এই পৃথিবীর চারিদিকে ছন্দ ছড়িয়ে আছে, সেই ছন্দ মন ও কান পেতে শুনলে ভুবনকে যথার্থ চেনা সম্ভব হয়। যারা এই ছন্দ শুনতে ও অনুভব করতে পারে তারা ভুবনকে ছন্দ সুরের সংকেতে চিনতে পারবে।
১.৪ “পদ্য লেখা সহজ নয়”— পদ্য লেখা কখন সহজ হবে বলে কবি মনে করেন?
উঃ জীবন ছন্দময়, জীবনের সেই ছন্দে কান দিতে হবে, মন দিতে হবে, তাহলে জীবন পদ্যময় হয়ে উথবে।আর তখনি পদ্য লেখা সহজ হবে বলে কবি মনে করেন।
১.৫ “ছন্দ শোনা যায় নাকো”—কখন কবির ভাবনায় আর ছন্দ শোনা যায় না?
উঃ সকল প্রকার দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে মন না দিলে ছন্দ শোনা যায় না বলে কবি মনে করতেন। অর্থাৎ ছন্দ শুনতে গেলে ঝগড়া ভুলে একাগ্রচিত্ত হতে হয়।
২. বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণে এবং বিশেষণগুলিকে বিশেষ্য পরিবর্তন করা এবং বাক্যরচনা কর :
ঝড়, মন, ছন্দ, দিন, সুর, সংকেত, দ্বন্দ্ব, মন্দ, ছদহীন, পদ্যময়, সহজ।
বিশেষ্য | বিশেষণ | বাক্য |
ঝড় | ঝোড়ো | আজ সমস্ত দিনই ঝোড়ো হাওয়া বইছে। |
মন | মানসিক | বিপদে সে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। |
ছন্দ | ছন্দবদ্ধ | তারা ছন্দবদ্ধ তালে গান গাচ্ছে। |
দিন | দৈনিক | আমি দৈনিক চার ঘণ্টা পড়াশোনা করি। |
সুর | সুরেলা | সকাল থেকে কোকিলটি সুরেলা গলায় ডেকে চলেছে। |
সংকেত | সাংকেতিক | গোয়েন্দা সাংকেতিক চিহ্নের সাহায্যে চিঠি লিখেছেন। |
দ্বন্দ্ব | দ্বান্দ্বিক | দুই দলের মধ্যে দ্বান্দ্বিক আলোচনা চলছে। |
মন্দতা | মন্দ | মানুষের মন্দতা দূর হলে সমাজে শান্তি ফিরে আসবে। |
ছন্দহীনতা | ছন্দহীন | ছন্দহীনতার কারণে কবিটি আর কিছু নতুন লিখতে পারছেন না। |
পদ্য | পদ্যময় | পদ্য আমাদের মনের আনন্দের খোরাক। |
সহজতা | সহজ | তাঁর আচরনের সহজতা আমাদের মুগ্ধ করে। |
৩. নীচের শব্দগুলিকে আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহার করে দুটি করে বাক্য লেখো :
মন্দ, দ্বন্দ্ব, তাল, ডাক, বাজে, ছড়া, মজা, নয়।
মন্দ (খারাপ)—– সর্বদা মন্দ সঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
মন্দ (হালকা)—— গরমকালের বিকালে মৃদু–মন্দ বাতাস বয়ে চলেছে।
দ্বন্দ্ব (সংশয়)—– মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব করে কোনো লাভ নেই।
দ্বন্দ্ব (কলহ)——- মনে দ্বন্দ্ব থাকলে উন্নতি করা সম্ভব নয়।
তাল (ফলবিশেষ)—- ভাদ্র মাসে তাল পাকে।
তাল (লয়)——– সুর-তাল-লয় সঠিক রাখলেই গান শুনতে ভালো লাগে।
ডাক(আহ্বান)—– শিশুর মুখে মা ডাক শুনতে মিষ্টি লাগে।
ডাক (চিঠির মাধ্যম) —-সকালের ডাকে তার চিঠি পেয়েছি।
বাজে (মন্দ)—— কারোর সম্বন্ধে বাজে কথা বলা উচিত না।
বাজে (আওয়াজ) —-সন্ধ্যা আরতিতে শাঁখ বাজে।
ছড়া (গুচ্ছ)——– একছড়া কলা কিনে আনতে হবে।
ছড়া (ছন্দবদ্ধ পদ্য)—- ছড়া পড়তে বেশ মজা লাগে।
মজা (আনন্দ)——– নতুন জামা পেয়ে শিশুটি খুব মজা পেয়েছে।
মজা (নষ্ট)———– সমস্ত কাঁঠালটি মজে গিয়ে খাওয়ার অযোগ্য হয়ে উঠেছে ।
নয় ( সংখ্যাবিশেষ)– এই মাসের নয় তারিখে আমাদের পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ হবে।
নয় ( না সূচক অব্যয়)- গরীব দুঃখীকে অবমাননা করা উচিত নয়।
৪. নীচের শব্দগুলি কোন্ মূল শব্দ থেকে এসেছে লেখ :
জ্যোৎস্না > জোছনা,
চক্র > চাকা,
কর্ণ > কান,
দ্বিপ্রহব > দুপুর,
ঝিল্লি > ঝিঝি
৫. কবিতার ভাষা থেকে মৌখিক ভাষায় রূপান্তরিত করা ।
৫.১ ছন্দ আছে ঝড়–বাদলে।
৫.২ ছন্দে বাঁধা রাত্রি–দিন।
৫.৩ কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন।
৫.৪ চিনবে তারা ভুবনটাকে/ ছন্দ–সুরের সংকেতে।
৫.৫ কান না দিলে ছন্দে যেনো/পদ্য লেখা সহজ নয়। বাঁধা।
উত্তরঃ
৫.১ ঝড়-বৃষ্টিতে ছন্দ আছে।
৫,২ দিন-রাত্রি ছন্দে বাঁধা
৫.৩ কোন কিছুই ছন্দহীন নয়।
৫.৪ ছন্দ সুরের সংকেতে তারা ভুবনকে চিনবে।
৫.৫ ছন্দে কান না দিলে পদ্য লেখা সহজ হবে না।
- কান’শব্দটিকে পাঁচটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করে বাক্য লেখো :
কান– ( ইন্দ্রিয়বিশেষ) – আমরা কানের সাহায্যে শ্রবণ করি।
কানমলা– (শাস্তি পদ্ধতি)- পড়া না পারায় শিক্ষক ছাত্রটির কান মুলে দিলেন।
কানপাতলা– ( কথা গোপন রাখতে অসমর্থ) –সে খুব কানপাতলা, তাঁর কাছে কোন গোপন কথা বলা যাবে না।
কান খাড়া– ( আগ্রহ সহকারে) – রাম দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সব কথা কান খাড়া করে শুনতে লাগল।
কানে লাগা– (শ্রুতি কটু)– মিতার বেসুরো গান খুব কানে লাগে।
৭. ঝড়–বাদল’—এমনই সমার্থক বা প্রায়সমার্থক পাঁচটি শব্দ লেখো।
উত্তরঃ চিঠি-পত্র, খাতা-পত্তর, বন-জঙ্গল, নদী-নালা, খাল-বিল।
৮. তোমার পরিচিত আর কোন্ কোন্ যানবাহনের চলার মধ্যে নির্দিষ্ট ছন্দ রয়েছে?
উত্তর: – সাইকেল, রিকশা, গোরুরগাড়ি, ভ্যান ইত্যাদির চলার মধ্যে ছন্দ রয়েছে।
৯. নানা প্রাকৃতিক ঘটনায় কীভাবে প্রকৃতির ছন্দ ধরা পড়ে?
উঃ নানা প্রাকৃতিক ঘটনার ছন্দ কান পেতে বা মন পেতে শুনলে তাতে প্রকৃতির ছন্দ ধরা পড়বে।
কান পেতে শোনা যাবে এমন | মন পেতে শোনা যাবে এমন |
পাখির ডাক, ঝিঁঝিঁর ডাক, নদীর কলতান, বৃষ্টির শব্দ,মেঘের গর্জন, বায়ু প্রবাহ | দুঃখীর হাহাকার, হৃদয়ের শব্দ,রাতের নীরবতা,দিন রাতের চলাচল। |
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘পালকির গান’ কবিতাটি শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে সংগ্রহ কর। নিজে করা।
১০. সমার্থক শব্দ লেখ :
জল, দিন, রাত্রি, নদী, ভুবন।
জল : সলিল, নীর, বারি, পানি, অম্বু।
দিন : দিবস, দিবা, অহ্ন, অহ
রাত্রি : নিশি, রাত,রজনি, শর্বরী, নিশীথ।
নদী : তটিনী, নর্দু, সরিৎ, প্ৰবাহিণী, স্রোতস্বিনী।
ভুবন : পৃথিবী, জগৎ, বিশ্ব, অবনী, মেদিনী।
১১. শব্দযুগলের অর্থ পার্থক্য দেখাও ;
দিন–দিবস
দীন–দরিদ্র
শূর–বীর,
সুর–দেবতা
মন—হৃদয়
মণ–পরিমাপের একক
সকল–সব
শকল–মাছের আঁশ
১২. যারা–তারার মত তিনটি সাপেক্ষ শব্দজোড় তৈরি কর।
উত্তর:- যেমন-তেমন, যিনি-তিনি, যদি-তবে।
১৩. কবিতা থেকে খুঁজে নিয়ে তিনটি সর্বনাম লেখ।
উত্তর:- সকল, যারা, তারা।
১৪. কবিতায় রয়েছে এমন চারটি সম্বন্ধ পদ’ উল্লেখ কর।
উত্তর:- পাখির ডাকে, ঝিঝির ডাকে, জলের ছন্দে, ঘড়ির কাঁটা।
১৫. নীচের বাক্য/বাক্যাংশের উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ আলাদাভাবে দেখাওঃ।
১৫.১ ছন্দ আছে ঝড়-বাদলে।
১৫.২ দেখবে তখন তেমন ছড়া/কেউ লেখেনি আর কোথাও।
১৫.৩ জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে/নৌকো জাহাজ দেয় পাড়ি।
১৫.৪ চিনবে তারা ভুবনটাকে/ছন্দ সুরের সংকেতে।
উত্তরঃ
উদ্দেশ্য | বিধেয় |
ছন্দ | আছে ঝড় বাদলে |
তেমন ছড়া | আর কেউ কোথাও লেখেনি তখন দেখবে। |
নৌকো জাহাজ | জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে দেয় পাড়ি। |
তারা | ভুবনটাকে ছন্দ সুরের সংকেতে চিনবে |
১৬. কারক–বিভক্তি নির্ণয় কর।
১৬.১ ছন্দে শুধু কান রাখো।
উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১৬.২ ছন্দ আছে ঝড় বাদলে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১৬.৩ দিনদুপুরে পাখির ডাকে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১৬.৪ ছন্দে চলে রেলগাড়ি।
উত্তরঃ কর্তৃকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
১৬.৫ চিনবে তারা ভুবনটাকে।
উত্তরঃ কর্তৃকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
Click Here To Download The Pdf