ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা
(তৃতীয় অধ্যায়)
ষষ্ঠ শ্রেণী
দু-এককথায় উত্তর দাও :-
১ আদিম মানুষ কীভাবে সভ্য হয়ে উঠেছে?
উঃ নিজের বুদ্ধি আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে আদিম মানুষ সভ্য হয়ে উঠেছে।
২ কবে থেকে মানুষ জোট বাঁধতে শুরু করেছিল?
উঃ. পাথরের যুগ থেকে মানুষ জোট বাঁধতে শুরু করেছিল
৩ কীভাবে শুরু হয় জমির জন্য লড়াই?
উঃ. স্থায়ী বসতবাড়ি ও চাষের জন্য জমির চাহিদা বাড়ে ফলে শুরু হয় জমির জন্য লড়াই।
৪ বর্ণ বা লিপির প্রয়োজন হয়েছিল কেন?
উঃ. মানুষের লেখার জন্য বর্ণ বা লিপির প্রয়োজন হয়েছিল।
৫ সভ্যতার সব থেকে বড় মাপকাঠি কি?
উঃ লিপির ব্যবহার সভ্যতার সব থেকে বড় মাপ কাঠি।
৬ কবে ভারতীয় উপমহাদেশে নগর সভ্যতা গড়ে উঠল?
উঃ খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে।
৭সভ্যতা গড়ে ওঠার একটি শর্ত লেখো।
উত্তর :- সভ্যতা গড়ে উঠতে গেলে সেখানে শহর বা গ্রাম গড়ে উঠতে হবে।
৮ মানুষের নানা ভাগ তৈরি হল কীভাবে?
উঃ নানা কাজের বিচারে মানুষের নানা ভাগ তৈরী হল।
৯ প্রাচীন ভারতের দুটি সভ্যতার নাম লেখো।
উঃ মেহেরগড় সভ্যতা ও হরপ্পা সভ্যতা।
১০ শাসক গোষ্ঠী কারা?
উঃ যারা গোটা সমাজকে শাসন করত তাদের বলা হয় শাসক গোষ্ঠী।
১১ আদিম গোষ্ঠীসমাজে পুঁতি বানানোর কারিগরকে কাদের ওপর নির্ভর করতে হত?
উঃ. আদিম গোষ্ঠীসমাজে পুঁতি বানানোর কারিগরকে ব্রোঞ্জের কারিগর এবং কুমোরের ওপরে নির্ভর করতে হত
১২ তামা– পাথরের যুগ কাকে বলে?
উঃ নতুন পাথরের যুগের শেষে মানুষ তামা ও পাথর দুটিই ব্যবহার করত, তাই সেই যুগকে তামা- পাথরের যুগ বলা হয়।
১৩. ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতার নাম কী ?
উত্তর :- মেহেরগড় সভ্যতা।
১৪মেহেরগড় সভ্যতায় কোন্ দুই ধাতুর ব্যবহার হত এবং কোন্ ধাতুর ব্যবহার হত না?
উঃ. মেহেরগড় সভ্যতায় তামা ও কাঁসার ব্যবহার হত এবং লোহার ব্যবহার হত না
১৫ কোথায় মেহেরগড় সভ্যতার খোঁজ পাওয়া গেছে?
উঃ পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে বোলান গিরিপথ থেকে খানিকটা দূরে মেহেরগড় সভ্যতার খোঁজ পাওয়া গেছে।
১৬ কবে মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কৃত হয়েছিল ?
উত্তর :- ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে।
১৭. মেহেরগড় সভ্যতা কে আবিষ্কার করেছিলেন?
উঃ জাঁ ফ্রাসোয়া জারিজ
১৮ জাঁ ফ্রাসোয়া জারিজ কে?
উঃ জঁ ফ্রাসোয়া জারিজ ছিলেন একজন ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক যিনি মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কার করেন।
১৯ মেহেরগড় সভ্যতার প্রথম পর্বের সময়কাল লেখ।
উঃমেহেরগড় সভ্যতার প্রথম পর্বের সময়কাল, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ পর্যন্ত।
২০ উপমহাদেশে সবথেকে পুরোনো শস্য মজুত রাখার বাড়ি পাওয়া গেছে কোথায়?
উঃ মেহেরগড়ে।
২১ পৃথিবীতে সবথেকে পুরোনো কার্পাস চাষের নমুনা কোথায় পাওয়া গেছে?
উঃ পৃথিবীতে সবথেকে পুরোনো কার্পাস চাষের নমুনা পাওয়া গেছে মেহেরগড়ে।
২২ পুরোনো পর্যায়ে মেহেরগড়ের কয়েকটি গৃহপালিত পশুর নাম লেখো।
উঃ পুরোনো পর্যায়ে মেহেরগড়ের কয়েকটি গৃহপালিত পশুর নাম হল ছাগল, ভেড়া, কুঁজওয়ালা ষড়।
২৩ ভারতীয় উপমহাদেশের বাড়িগুলিতে প্রথম রোদে পোড়ানো ইটের ব্যবহার কোথায় দেখা যায়?
উঃ মেহেরগড় সভ্যতায়।
২৪ মেহেরগড় সভ্যতা ছিল মূলত কি জাতীয় সভ্যতা?
উঃমেহেরগড় সভ্যতা প্রধানত কৃষি নির্ভর সভ্যতা।
২৫ মেহেরগড় সভ্যতার দ্বিতীয় পর্বের সময়কাল লেখ।
উঃ মেহেরগড় সভ্যতার দ্বিতীয় পর্বের সময়কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ পর্যন্ত।
২৬ এই পর্যায়ে কীভেবে মাটির পাত্র তৈরি হত?
উঃ মেহেরগড় সভ্যতার দ্বিতীয় পর্যায়ে মাটির পাত্রগুলি হাতে তৈরী করা হত।
২৭. মেহেরগড় সভ্যতার কোন্ পর্বে কুমোরের চাকার ব্যবহার শুরু হয়েছিল?
উত্তর :- দ্বিতীয় পর্বে।
২৮ মেহেরগড় সভ্যতার গয়নাগুলি কি দিয়ে তৈরী করা হত?
উঃনানা রকম পাথর ও শাঁখ দিয়ে মেহেরগড় সভ্যতার গয়নাগুলি তৈরী করা হত।
২৯ মেহেরগড় সভ্যতার তৃতীয় পর্বের সময়কাল লেখ।
উঃ মেহেরগড় সভ্যতার তৃতীয় পর্বের সময়কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩৮০০ অব্দ পর্যন্ত।
৩০. মেহেরগড় সভ্যতায় মৃতদেহকে কোন রঙের কাপড় জড়িয়ে সমাধি দেওয়া হত?
উত্তর :- লাল রঙের।
৩১. মেহেরগড় সভ্যতা কোন্ নদীকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল?
উত্তর :- বালুচিস্তান প্রদেশের ঝোব নদীকে।
৩২হরপ্পা সভ্যতার হরপ্পা কেন্দ্রটি কবে আবিষ্কৃত হয়?
উত্তর :- ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে।
৩৩ কে হরপ্পা সভ্যতায় খোঁড়াখুড়ি শুরু করেছিলেন?
উঃ দয়ারাম সাহানি।
৩৪. হরপ্পা সভ্যতার মহেনজোদাড়ো কেন্দ্রটি কবে আবিষ্কৃত হয়?
উত্তর :- ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে।
৩৫কে মহেনজোদাড়ো আবিষ্কার করেন?
উঃ রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়।
৩৬. ‘আলেকজান্ডার কানিংহাম নাম কোন সভ্যতার আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে?
উত্তর :- হরপ্পা সভ্যতা।
৩৭. একটি তামা–ব্রোঞ্জ যুগের ভারতীয় সভ্যতার নাম লেখো।
উত্তর :- হরপ্পা সভ্যতা।
৩৮. ‘আলেকজান্ডার কানিংহাম কে ছিল?
উত্তর :- ব্রিটিশ ভারতের প্রত্নতত্ত বিভাগের প্রধান।
৩৯ কে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়ো সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ পেশ করেন?
উঃ জন মার্শাল।
৪০. কবে হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংস হয়েছিল বলে মনে করা হয়?
উত্তর :- আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।
৪১ হরপ্পা সভ্যতাকে প্রায় ইতিহাস যুগের সভ্যতা বলা হয় কেন?
উঃ হরপ্পা সভ্যতার লোকেরা লিখতে জানলেও সেই লেখা আজও পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয় নি । তাই একে প্রায় ইতিহাস যুগের সভ্যতা বলা হয়।
৪২উত্তর দিকে হরপ্পা সভ্যতা কতদূর পর্যন্ত গড়িয়ে পড়েছিল?
উঃ জম্মুর মান্ডা এই সভ্যতার উত্তর সীমা।
৪৩ হরপ্পা সভ্যতার পশ্চিম সীমা কি?
উঃপাকিস্তানের বালুচিস্তান
৪৪ হরপ্পা সভ্যতার পুর্ব সীমা কি?
উঃ পূর্বে আলমগীর পর্যন্ত
৪৫. দক্ষিণ দিকে হরপ্পা সভ্যতা কতদূর পর্যন্ত গড়িয়ে পড়েছিল?
উত্তর :- গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চল পর্যন্ত।
৪৬. কতটা অঞ্চল জুড়ে হরপ্পা সভ্যতা বিস্তার লাভ করেছিল?
উত্তর :- প্রায় ৭ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।
৪৭. হরপ্পা সভ্যতা কোন ধরনের সভ্যতা ?
উত্তর :- নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা।
৪৮. হরপ্পা সভ্যতার প্রতিটি বাড়িতে ক–টি করে রান্নাঘর থাকত?
উত্তর :- একটি করে ।
৪৯. কে প্রথম হরপ্পা উপত্যকায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পান?
উত্তর :- চার্লস ম্যাসন।
৫০. হরপ্পা কোথায় অবস্থিত?
উত্তর :- পাঞ্জাবের মন্টেগোমারি জেলায় (বর্তমানে পাকিস্তান)।
৫১. ‘হরপ্পা’ কথাটির মানে কী?
উত্তর :- পশুপাখির খাবার।
৫২. মহেনজোদারো কোথায় অবস্থিত?
উত্তর :- সিন্ধুপ্রদেশের লারকানা জেলায় (বর্তমানে পাকিস্তানে)।
৫৩. “সিটাডেল” কথাটির মানে কী?
উত্তর :- উঁচু এলাকা।
৫৪হরপ্পা সভ্যতায় কোন কেন্দ্রে কোন সিটাডেল ছিল না
উঃ চানহুদারোতে।
৫৫. হরপ্পা সভ্যতায় পাঁচিল দিয়ে ঘেরা উঁচু কক্ষগুলিকে কী বলা হত?
উত্তর :- সিটাডেল।
৫৬ সিটাডেলটি নগরের কোন অঞ্চলে থাকতো?
উঃ নগরের উত্তর বা উত্তর পশ্চিম দিকে।
৫৭ নগরের নীচু বসতি এলাকা কোথায় থাকত?
উঃ নগরের পূর্ব বা দক্ষিণ পূর্ব অংশে।
৫৮হরপ্পায় কোন কোন স্থানে ফটক ছিল?
উঃ নগরের উত্তর ও পশ্চিম দিকে দুটি ঢোকা ও বেরোনোর ফটক ছিল।
৫৯. সিন্ধুর অধিবাসীরা কোন্ ধাতুর ব্যবহার জানত না?
উত্তর :- লোহার।
৬০. হরপ্পা সভ্যতার কোথায় স্নানাগার আবিষ্কার করা হয়েছে?
উত্তর :- মহেনজোদারো-তে।
৬১. মহেন–জো–দারোর স্নানাগারটি কারা ব্যবহার করতেন?
উত্তর :- নগরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
৬২হরপ্পায় শস্য রাখার বাড়িটি কেমন ছিল?
উঃ হরপ্পায় শস্য রাখার বাড়িটির ভেতরে ছিল দুই সারিতে ভাগ করা মোট বারোটা তাক।
৬৩. কোন গাছকে সিন্ধুবাসীরা দেবতারূপে পুজো করত?
উত্তর :- অশ্বত্থ।
৬৪. হরপ্পা সভ্যতার বড়ো শস্যাগার কোথায় ছিল?
উত্তর :- হরপ্পা ও মহেনজোদারো-তে।
৬৫. ঢোলাবিরা বিখ্যাত কেন?
উত্তর :- হরপ্পা সভ্যতার একটি কেন্দ্র।
৬৬. হরপ্পার প্রধান প্রশাসক কে ছিলেন বলে অনুমান করা হয়?
উত্তর :- একজন পুরোহিত-রাজা।
৬৭. মেসোপটেমিয়ায় কতকগুলি হরপ্পার সিলমোহর পাওয়া গেছে ?
উত্তর :- ২৩টি।
৬৮. মহেনজোদারোর স্নানাগারটির আয়তন উল্লেখ করো।
উত্তর :- ১৮০ফুট x ১০৮ ফুট ।
৬৯. হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা কোন্ ধাতুর ব্যবহার জানত না ?
উত্তর :- লোহার।
৭০. হরপ্পা সভ্যতার রাস্তাঘটিগুলির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর :- পাকা, চওড়া ও সোজা।
৭১. হরপ্পা সভ্যতার কোন কেন্দ্রে ধানের চিহ্ন পাওয়া গেছে?
উত্তর :- গুজরাটের রংপুর ও লোথালে।
৭২. হরপ্পা সভ্যতার কোথায় লাঙলের ফলার দাগ পাওয়া গেছে ?
উত্তর :- রাজস্থানের কালিবঙ্গানে।
৭৩. হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা কোন পশুর ব্যবহার জানত না?
উত্তর :- ঘোড়ার।
৭৪. সিন্ধুর অধিবাসীরা কোন কোন ধাতুর ব্যবহার জানত?
উত্তর :- তামা, কাঁসা, ব্রোঞ্জের।
৭৫. হরপ্পা সভ্যতায় কীসের তৈরি চিরুনি আবিষ্কৃত হয়েছে?
উত্তর :- হাতির দাঁতের।
৭৬. হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা কোন্ ফসলের চাষ জানত না?
উত্তর :- ধান (রংপুর ও লোথাল ছাড়া)।
৭৭. হরপ্পার সিলমোহরগুলি থেকে কোন্ কোন্ বিষয় সম্পর্কে জানা যায়?
উত্তর :- অর্থনীতি, ব্যাবসা ও ধর্ম।
৭৮. ‘লোথাল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর :- গুজরাটি ভাষায় মৃতের স্থান।
৭৯. কৃষিকাজ আদিম মানুষের জীবনে কী পরিবর্তন এনেছিল ?
উত্তর :- স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শিখিয়েছিল।
৮০. হরপ্পা সভ্যতার সমসাময়িক দুটি সভ্যতার নাম বল
উত্তর :- মিশরীয় ও সুমেরীয়
৮১. হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে জলপথে কোন্ সভ্যতার বাণিজ্য চলত ?
উত্তর :- মেসোপটেমিয়ার।
৮২. হরপ্পা সভ্যতার একটি সামুদ্রিক বন্দরের নাম করো।
উত্তর :- লোথাল।
৮৩. পশু পরিবেষ্টিত যোগী মূর্তিটি কোন্ দেবতার বলে মনে করা হয়?
উত্তর :- শিবের আদিরূপ বলে মনে করা হয়।
৮৪. নতুন পাথরের যুগের একটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর :- নতুন পাথরের যুগে মানুষ কৃষিকাজ করতে শিখেছিল।
৮৫. ‘লোথাল’ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর :- ভোগাবোর নদীর তীরে।
৮৬. কবে মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে হরপ্পা সভ্যতার বাণিজ্যে ভাটা পড়েছিল ?
উত্তর :- আনুমানিক ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর থেকে।
৮৭. হরপ্পা নগরী কোন্ নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল?
উত্তর :- রাভি নদী।
৮৮. হরপ্পা সভ্যতার লিপিতে কতকগুলি চিহ্ন ব্যবহার করা হত ?
উত্তর :- প্রায় ৩৭৫ থেকে ৪০০টি।
৮৯. সিন্ধুবাসীদের মাটির পাত্রগুলি কী রঙের হত?
উত্তর :- লাল ও কালো।
৯০. কোন ভাষার সঙ্গে হরপ্পা সভ্যতার ভাষার মিল চালু করা যায় ?
উত্তর :- দ্রাবিড় ভাষার।
৯১. সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধার করা যায়নি কেন?
উত্তর :- সিন্ধু লিপির বর্ণমালা ছিল না এবং তা ছিল সাংকেতিক।
৯২. আধুনিক সাইনবোর্ডের মতো জিনিস হরপ্পা সভ্যতার কোথায় আবিষ্কৃত হয়েছে?
উত্তর :- ঢোলাবিরায়।
৯৩. সিন্ধুলিপি পাঠোদ্ধার সম্ভব হলে কী সুবিধা হতে পারে?
উত্তর :- ভারতীয় উপমহাদেশের এবং হরপ্পা সভ্যতার অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে।
৯৪. আজ থেকে কত বছর আগে হরপ্পা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল?
উত্তর :- প্রায় পাঁচ হাজার।
৯৫. কার নেতৃত্বে হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করার চেষ্টা শুরু হয়েছিল?
উত্তর :- জন মার্শাল-এর নেতৃত্বে।
৯৬. হরপ্পা সভ্যতার কোথায় বোতাম আকারের সিলমোহর পাওয়া গেছে?
উত্তর :- লোথালে।
৯৭. মহেনজোদারোর সিলমোহরে যোগীর মূর্তিটি কোন দেবতার বলে কল্পনা করা হয়?
উত্তর :- পশুপতি শিবের।
৯৮. সিন্ধুলিপির একটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর :- সিন্ধুলিপি ডানদিক থেকে বামদিকে লেখা হত।
৯৯. মহেনজোদারো কথাটির মানে কী ?
উত্তর :- মৃতের স্তূপ।
১০০ হরপ্পা সভ্যতায় মৃতদেহের মাথা কোন দিক করে শুইয়ে রাখা হত?
উঃউত্তরদিক করে
২ নম্বরের প্রশ্নঃ
১ আদিম মানুষ কীভাবে সভ্য হল?
উত্তর:- পুরোনো পাথরের যুগের শেষদিক থেকে কৃষিকাজ, স্থায়ী বসতবাড়ি এবং পশুপালনের ফলে বদলে যায় মানুষের জীবনযাপনের নানা দিক। মানুষ নিজের প্রয়োজনে বুদ্ধি আর পরিশ্রমের জোরে এই বদল ঘটায়। এইভাবেই আদিম মানুষ সভ্য হয়ে ওঠে।
২ আদিম মানুষের যুগ থেকে ইতিহাস এসে পড়ল সভ্যতার যুগে—বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:–আদিম মানুষ যেদিন থেকে জোট বেঁধে বাস করতে শুরু করে, সেদিন থেকেই সভ্যতার সূচনা হয়। এরপর ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সমাজ। কৃষি, পশুপালন ও বাণিজ্য—এমনই বিভিন্ন ধরনের জীবিকার সাহায্যে মানুষ উপার্জন করা শুরু করে। উন্নত হয় মানুষের জীবনযাত্রা। এরপর ক্রমে তারা লিখতে শেখে, গড়ে ওঠে গ্রাম ও নগর। এভাবেই তৈরি হয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি এবং আদিম মানুষ হয়ে ওঠে সভ্যতারই অগ্রদূত।
৩ কীভাবে চালু হয় নিয়ম বা নিয়মের শাসন?
উত্তর:–আদিম মানুষ নিজেদের নিরাপত্তার কারণে জোট বেঁধে বাস করতে থাকে। ধীরে ধীরে তারা নিজেরাই নিজেদের নিয়মকানুন ঠিক করে। তবে আদিম মানুষের মধ্যে বিবাদ বাঁধলেও তারা নিজেরাই তা মিটিয়ে নিত। ঠিক হয় সবাই নিয়ম মেনে চলবে। এভাবেই চালু হয় নিয়ম বা নিয়মের শাসন।
৪ সভ্যতার নানা দিক গুলি কি কি?
উঃ সভ্যতার নানা দিক গুলি হল স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শিখে উন্নত গ্রাম ও নগর জীবন শুরু করা। উন্নত শাসন কাঠামো গড়ে তোলা ও লিপির ব্যবহার শেখা সভ্যতার পরিচয়।শিল্প ও স্থাপত্যের নমুনা সভ্যতার একটি বড় দিক।সভ্যতা বলতে জীবনযাপনের উন্নতি বোঝানো হয়।
৫মেহেরগড় সভ্যতার তিনটি পর্ব উল্লেখ কর।
উত্তর:–
মেহেরগড় সভ্যতার তিনটি পর্ব ছিল, যথা—
[1] প্রথম পর্ব, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ পর্যন্ত।
[2] দ্বিতীয় পর্ব, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ পর্যন্ত।
[3] তৃতীয় পর্ব, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩৮০০ অব্দ পর্যন্ত।
৬ মেহেরগড় সভ্যতার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তর:– মেহেরগড় সভ্যতার অন্যতম কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল—
i)মেহেরগড় সভ্যতা ছিল একটি গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক সভ্যতা।
ii)তামা ও পাথর দুটিরই ব্যবহার হত মেহেরগড় সভ্যতায়। তাই এই সভ্যতাকে তামা-পাথরের সভ্যতা বলা হয়।
iii)মেহেরগড় সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর সমাধিক্ষেত্র।
৭ মেহেরগড় সভ্যতার প্রথম পর্বের পরিচয় দাও।
উত্তর:– মেহেরগড় সভ্যতার প্রথম পর্বে মেহেরগড়বাসী গম ও যব ফলাতে জানত।গৃহপালিত পশু ছিল ছাগল, ভেড়া ও কুঁজওয়ালা ষাঁড়।মেহেরগড়ে পাথরের জাঁতা বা শস্য পেষার যন্ত্র মিলেছে। জানা গেছে এই সভ্যতার প্রথম পর্বে মেহেরগড়বাসী পাথরের ছুরি ও পশুর হাড়ের যন্ত্রপাতি বানাতে পারত। মাটির বাড়িগুলিতে রোদে পোড়ানো ইটের ব্যবহার দেখা যায়। এই বাড়িগুলিতে একাধিক ঘর থাকত।
৮ মেহেরগড়ে বাড়িঘরগুলি কেমন ছিল?
উত্তর:–মেহেরগড়ে বাড়িঘর গুলি রোদে পোড়ানো ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। বাড়িগুলিতে একাধিক ঘর ছিল। শস্য মজুত রাখার বাড়িগুলি ছিল সাধারণ বাড়ির থেকে অনেক বড়।
৯মেহেরগড় সভ্যতার দ্বিতীয় পর্যায়টি সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, মেহেরগড় সভ্যতার দ্বিতীয় পর্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর:– মেহেরগড় সভ্যতার দ্বিতীয় পর্বে কৃষিকাজের ক্ষেত্রে গম ও যবের পাশাপাশি কার্পাস চাষেরও প্রমাণ মিলেছে। কাস্তের ব্যবহার করা হত।এই পর্বের প্রথম দিকে মাটির পাত্রগুলি হাতে করে তৈরি করা হত। দ্বিতীয় পর্বের একেবারে শেষের দিকে কুমোরের চাকার ব্যবহার শুরু হলে তাতে মাটির পাত্র তৈরি হতে থাকে। এই পর্বে মেহেরগড়বাসী বিভিন্ন রকম পাথর ও শাঁখ দিয়ে গয়না তৈরি করতে শিখেছিল।
১০মেহেরগড় সভ্যতার তৃতীয় পর্বের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর:– কৃষিক্ষেত্রে এই পর্বে মেহেরগড়বাসী নানারকম গম এবং যব চাষ করত। কুমোরের চাকায় মাটির পাত্র তৈরির কৌশল বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।তৃতীয় পর্বে বসতি হিসেবে মেহেরগড় সভ্যতার আয়তন বাড়ে। তামার ব্যবহার শুরু হয়েছিল। পাথরের তৈরি জিনিসপত্রও এসময়ে ব্যবহার করা হত। শেষ পর্বে সিলমোহরের ব্যবহার শুরু হয়েছিল।
১১ মেহেরগড় সভ্যতার মাটির পাত্রগুলির বর্ণণা দাও।
উঃ মেহেরগড় সভ্যতার তৃতীয় পর্যায়ে কুমোরের চাকা ব্যবহার করে মাটির পাত্র তৈরি করা হত।তৈরি পাত্রগুলি চুল্লিতে পোড়ানো হত এবং তারপর, তাতে নানারকম নকশা ও ছবি আঁকা হত। একরঙা, দুইরঙা ও বহুরঙা মাটির হদিসও পাওয়া গেছে।
১২ মেহেরগড় সভ্যতায় সমাধি কীভাবে দেওয়া হত লেখ।
উত্তর:–মেহেরগড় সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর সমাধিক্ষেত্র। সমাধিতে মৃতদেহ সোজাসুজি বা কাত করে শুইয়ে দেওয়া হত। মৃতের সঙ্গে দেওয়া হত শাঁখ বা পাথরের গয়না, কুড়ল প্রভৃতি। সমাধিতে নানা গৃহপালিত পশুও দেওয়া হত। মৃতদেহকে লাল কাপড়ে জড়িয়ে লাল রং মাখিয়ে সমাধিস্থ করা হত।
১৩হরপ্পা সভ্যতা অনেকগুলি কেন্দ্র নিয়ে গড়ে উঠেছিল। এগুলির মধ্যে অন্তত চারটি স্থানের নাম লেখো।
উঃ হরপ্পা সভ্যতার কয়েকটি কেন্দ্র হল- লোথাল , কালিবঙ্গান, ঢোলাবিরা,চানহুদারো।
১৪ সিটাডেল কী? অথবা, টীকা লেখো: সিটাডেল।
উত্তর:–হরপ্পার নগরগুলির বসতি এলাকা দুভাগে বিভক্ত ছিল। একটি ছিল উঁচু ঢিবি এলাকা অপরটি ছিল নীচু এলাকা। নগরের উঁচু এলাকাগুলিকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা সিটাডেল নাম দিয়েছেন।এগুলি সাধারণত নগরের উত্তর বা উত্তর-পশ্চিমদিকে অবস্থিত ছিল। সিটাডেলগুলিতে নগরের প্রধান বা বিশিষ্ট ব্যক্তিরই বসবাস করত। এই এলাকা উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা থাকত।
১৫ হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা কেমন ছিল?
উত্তর:–হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা — হরপ্পার নগরগুলিতে বসতি অঞল দুভাগে বিভক্ত ছিল। শহরের উঁচু এলাকা বা সিটাডেল অবস্থিত ছিল নগরের উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিকে। নীচু বসতি এলাকাটি অবস্থিত ছিল পূর্ব বা দক্ষিণ-পূর্ব অংশে। সিটাডেলগুলিতে নগরের প্রধান বা বিশিষ্ট ব্যক্তিরই বসবাস করত। শহরের নীচু অংশে ছিল মানুষের আসল বসতি।
১৬ হরপ্পা সভ্যতার ঘরবাড়ি কেমন ছিল?
উঃ হরপ্পা সভ্যতায় ঘরবাড়িগুলি ছিল পোড়া ইটের তৈরি। হরপ্পা সভ্যতায় যেমন দোতলা তিনতলা বড়ো বাড়ি ছিল, তেমনই মাঝারি ও খুব ছোটো বাড়িও ছিল। বসত বাড়িগুলিতে বেশকিছু ঘর থাকলেও সেগুলিতে রান্নাঘর থাকত একটি করে, যা থেকে অনুমান করা হয় যে সেই সময়ে যৌথ পরিবারের অস্তিত্ব ছিল।
১৭ হরপ্পা সভ্যতার রাস্তাঘাট কেমন ছিল?
উঃ মহেনজোদারো ও হরপ্পার চওড়া, পাকা রাস্তাগুলি সাধারণত উত্তর-দক্ষিণ দিকে প্রসারিত ছিল। তুলনায় কম চওড়া রাস্তা ও সরু গলিগুলি ছিল পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত। রাস্তাগুলির দুধারে বাঁধানো ফুটপাথও ছিল।
১৮হরপ্পা সভ্যতার পয়ঃপ্রণালী কেমন ছিল?
উঃমহেনজোদারোর নীচু এলাকায় প্রায় ২০০০ বাড়ির জন্য অন্তত ২৭ টি কুয়ো ছিল। তবে হরপ্পায় এত সংখ্যক কুয়ো না থাকলেও প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার ছিল। ঢাকা নর্দমার সাহায্যে সুপরিকল্পিত জলনিকাশি ব্যবস্থা ছিল হরপ্পায়। প্রতিটি বাড়ি থেকে ছোটো নালার জল গিয়ে মিশত বড় নর্দমাগুলিতে।
১৯হরপ্পা সভয়তার সাধারণ মানুষের জীবিকা কি ছিল?
উঃ হরপ্পা সভ্যতায় বাণিজ্যের উন্নতির জন্য বণিকদের অনেক মর্যাদা ছিল। এছাড়া বিভিন্ন কারিগড় ছিলেন। তবে সমাজে মজুর ও শ্রমিকদের অবস্থা বেস খারাপ ছিল। তবে গ্রামীণ এলাকার মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ।
২০হরপ্পা সভ্যতায় কি কি ফসল চাষ হত?
উঃ হরপ্পা সভ্যতার মানুষ গম, যব, জোয়ার, বাজরা , নানারকম ডাল, সরষে ও ধান চাষ করত। তবে সব জায়গায় ধানের চাষ হত না।তবে তুলো ,তিল প্রভৃতি ফসলের চাষ হত।
২১হরপ্পার মানুষের পশুপালন সম্পর্কে যা জান লেখো
উঃ হরপ্পার মানুষ গৃহ পালিত পশুর ব্যবহার জানত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ষাঁড়, ভেড়া ও ছাগলের মতো গবাদি পশু। উটের ব্যবহার ও হরপ্পার লোকেরা জানত। ঘোড়ার ব্যবহার হরপ্পার মানুষেরা জানত। এছাড়া ঘুরে বেড়ানো পশুপালক গোষ্ঠী ছিল যারা ঘুরে ঘুরে পশু পালন করত।
২২ হরপ্পার মানুষদের পোশাক পরিচ্ছদ কেমন ছিল?
উঃ হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রাপ্ত মূর্তিগুলি থেকে এই সভ্যতার অধিবাসীদের পোষাক-পরিচ্ছদ ও অলংকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। নারী ও পুরুষের পোষাকে বিশেষ কোনো পার্থক্য ছিল না, উভয়েই ওপরের অংশটা শালের মতো এবং নিচের অংশটা ধুতির মত দেখতে পোষাক পরিধান করতো। পোষাক তৈরীর জন্য সুতি ও পশম ব্যবহার। এই সভ্যতায় নারী-পুরুষ উভয়েই বিভিন্ন রকমের আংটি, গলার হার, কঙ্কন ইত্যাদি অলংকার ব্যবহার করত। অলংকার নির্মাণে সোনা, রুপোসহ অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও বিভিন্ন দামি পাথর ব্যবহার করা হতো।
২৩ হরপ্পা সভ্যতার পাথর ও ধাতুর কারিগরি শিল্প সম্পর্কে যা জান লেখো
উঃ হরপ্পার কারিগরি শিল্পে পাথর ও ধাতু দুইয়েরই ব্যবহার হত। হরপ্পাবাসী লোহার ব্যবহার জানত না, তাই তারা কারিগরি শিল্পে তামা, কাসা ও ব্রোঞ্জ ধাতু ব্যবহার করত। এই সভ্যতায় তামা ও কাঁসার তৈরি ছুরি, কুঠার, বাটালি এবং মাটি ও ধাতুর তৈরি বাসনপত্র পাওয়া গেছে। জানা গেছে এই সভ্যতায় পাথরের ছুরি তৈরির কারখানা ছিল।
২৪ হরপ্পা সভ্যতার মাটির পাত্রের বর্ণণা দাও।
উঃহরপ্পা সভ্যতায় নানা ধরনের মাটির পাত্র তৈরি হত। প্রতিদিনের ব্যবহার উপযোগী পাত্রই বেশি তৈরি করা হত এবং মাটির পাত্রগুলি পোড়ানোর ফলে সেগুলির রং হত লালচে। কিছু। মাটির পাত্রের গায়ে চকচকে পালিশ বা উজ্জ্বল কালো রঙের নকশা আঁকা হত। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই ধরনের পাত্রগুলিকে ‘লালকালো মাটির পাত্র’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২৫ হরপ্পার কাপড় বুনন শিল্প কেমন ছিল?
উঃমহেনজোদারোতে পুরোনো কাপড় তৈরির নিদর্শন মিলেছে। পাশাপাশি এই সভ্যতায় কাপড়ে সুতোর কাজ করা শিল্পেরও চল ছিল, যার প্রমাণ মেলে মহেনজোদারোয় প্রাপ্ত এক পুরুষ মূর্তির গায়ের পোশাক থেকে।
২৬ হরপ্পা সভ্যতার গয়না শিল্পের বর্ণণা দাও।
উঃ হরপ্পা সভ্যতার কারিগরি শিল্পের অন্যতম নমুনা অনেক রকম মালার দানা। হরপ্পা সভ্যতায় সোনা, তামা, শাঁখ, দামি-কমদামি পাথর, হাতির দাঁত প্রভৃতির দ্বারা মালার দানা তৈরি করা হত। নীলচে লাপিস লাজুলি পাথরও গয়না বানাতে লাগত।
২৭হরপ্পা সভ্যতার শিল্প , ভাস্কর্য্য সম্পর্কে যা জান লেখ।
উঃহরপ্পা সভ্যতায় পাথর, ধাতুর ও পোড়ামাটির ভাস্কর্যের নজির পাওয়া যায়। একটি ব্রোঞ্জের তৈরী নারিমূর্তি পাওয়া গেছে মহেঞ্জোদাড়ো থেকে। ব্রোঞ্জের তৈরি কয়েকটি পশু- মূর্তি হরপ্পা সভ্যতায় পাওয়া গিয়েছে। নারী মূর্তি, পশু ও পাখির মূর্তিও পাওয়া গিয়েছে যা পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি।
২৮ হরপ্পা সভ্যতার বাণিজ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে হরপ্পা সভ্যতার ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, হরপ্পা সভ্যতার বাণিজ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর:– হরপ্পা সভ্যতার ২৩টি সিলমোহর মিলেছে মেসোপটেমিয়ায়।বোঝা যায় যে হরপ্পা ও মেসোপটেমিয়া উভয় সভ্যতার মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল। হরপ্পা সভ্যতার যুগে পারস্য উপসাগরীয় এলাকার সমুদ্র বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আসলে নদীর স্রোত ও হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে নৌকার সাহায্যে নদীপথ ধরে বাণিজ্য চলত। বিদেশ থেকে হরপ্পা সভ্যতায় আমদানি করা হত সোনা, রুপা, তামা, দামি পাথর হাতির দাঁতের তৈরি চিরুনি প্রভৃতি। আর হরপ্পা থেকে রপ্তানি করা হত বার্লি, ময়দা, তেল ও পশমজাত দ্রব্য প্রভৃতি।
২৯ হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংসের প্রধান প্রধান কারণগুলি লেখ।
[1] বন্যা : মহেনজোদারো নগরে বিরাট পাঁচিলের গায়ে কাদার চিহ্ন মিলেছে। মনে করা হয় বন্যার ফলেই সম্ভবত এই কাদা জমেছিল। হরপ্পা নদের এই বন্যায় মহেনজোদারোর ক্ষতি হয়েছিল।
[2] বৃষ্টিপাত কমে যাওয়াঃ এশিয়া মহাদেশের অনেক জায়গাতেই বৃষ্টিপাত কমতে থাকে (খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ অব্দ নাগাদ থেকে), ফলে এই সভ্যতার সমগ্র অঞ্চল জুড়ে শুষ্ক জলবায়ু দেখা যায়। শুষ্ক জলবায়ুর কারণে কৃষিকাজ সমস্যার মুখে পড়ে। তা ছাড়া বাড়ি তৈরির ইট পোড়ানোর জন্য চুল্লির জ্বালানিরূপে কাঠ ব্যবহার করা হত। গাছ কেটেই এই কাঠের জোগান দেওয়া হত। ব্যাপকভাবে গাছ কেটে নেওয়ার ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়।
[3] বাণিজ্যে ভাটা: মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে হরপ্পার বাণিজ্যে ভাটা পড়েছিল (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৯০০ অব্দের পর থেকে)। এর ফলে হরপ্পার অর্থনীতি সমস্যায় পড়ে।
[4] নগর শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা : ধীরে ধীরে হরপ্পার নগর শাসনব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এইসব সমস্যাগুলি থেকে মুক্ত হতে না পারায় হরপ্পা সভ্যতা শেষ পর্যায়ে পৌঁছোয় ও ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায়।
৩০ হরপ্পা সভ্যতার লিপি কী ?
উত্তর:–হরপ্পাবাসীরা লিখতে পারত। কিন্তু সেই লিপি আজ অবধি পড়া সম্ভব হয়নি। শুধু লিপি দেখে এই সভ্যতা সম্বন্ধে খানিকটা অনুমান করা গেছে। লিপিগুলিতে ৩৭৫ থেকে ৪০০টির মত চিহ্ন আছে। হরপ্পার লিপিগুলি লেখা হত ডানদিক থেকে বামদিকে। অনেকের অনুমান দ্রাবিড় ভাষার সঙ্গে হরপ্পার ভাষার মিল ছিল।পাত্র, সিলমোহর, তামার ফলকসহ নানা জিনিসের ওপরেই হরপ্পার লিপির খোঁজ পাওয়া গেছে। এই লিপিগুলি ঠিকমত ও সম্পূর্ণ পড়া গেলে ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক অজানা কথা জানা যাবে।
৩১ টীকা লেখঃ হরপ্পার সিলমোহর
উঃ হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সিলমোহর ব্যবহার করত। ভারতের বাইরে সুসা ও মেসোপটেমিয়াতেও হরপ্পার সিলমোহর আবিষ্কৃত হয়েছে। এই সিলমোহরগুলি তামা, ব্রোঞ্জ ও পোড়ামাটি ব্যবহার করা হতো।বেশির ভাগ সিলমোহরে একশিং ওলা একটি কল্পিত প্রাণীর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া শিং ওলা মানুষ, ষাঁড়, গাছ ও জ্যামিতিক নকশা খোদাই করা শিলমোহর পাওয়া গেছে।
৩২ হরপ্পা সভ্যতার ধর্ম সম্পর্কে যা জান লেখো।
উঃ প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, হরপ্পায় প্রাপ্ত পোড়ামাটির নারীমুর্তিগুলিকে হরপ্পা বা সিন্ধুর অধিবাসীরা মাতৃজ্ঞানে পূজা করত। হরপ্পা সভ্যতার মহেনজোদারোতে প্রাপ্ত এক সিলমোহরে এক যোগীমুর্তি ও তার পাশে গন্ডার, বাঘ, হাতি ও ষাঁড় দেখে মনে করা হয়, যে তারা আদি পশুপতি শিবের পূজা করত।হরপ্পায় পাওয়া সিলমোহরে ষাঁড়ের ছাপ দেখে মনে করা হয় যে, তারা ষাঁড়ের পূজা করত। তা ছাড়া সিলমোহর ও মাটির পাত্রে অশ্বথ গাছ ও পাতার ছবি দেখে মনে করা হয় যে, তারা এই গাছকে দেবতা হিসেবে পূজো করত।
৩৩ হরপ্পা সভ্যতায় নারীর অবস্থান কেমন ছিল?
উঃহরপ্পা সভ্যতার সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। এই সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রাপ্ত অর্ধনগ্ন নারীমূর্তিগুলি দেখে ঐতিহাসিকরা অনুমান করেন যে এই সভ্যতায় নারীরা যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করতো এবং দেবী মূর্তিপূজার প্রচলন থেকে অনুমান করা হয় এই সভ্যতায় নারীদের বিশেষ সম্মান ছিল।
Click Here To Download The PDF
I am fine
I am gameing in app pla