Saturday, December 21, 2024
HomeClassesClass 10বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ| Class 10 | History| 5th Chapter| Question Answer...

বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ| Class 10 | History| 5th Chapter| Question Answer Solved|

বিকল্প চিন্তা উদ্যোগ( উনিশ শতকের মধ্যভাগ

বিশ শতকের প্রথম ভাগ) : বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা

কোন ছাপাখানায় কলকাতার প্রথম ক্যালেন্ডার মুদ্রিত হয়?

উঃ জেমস অগাস্টাস হিকির ছাপাখানায়

প্রথম কোন বাঙ্গালী ছাপাখানার জন্য অক্ষরে ছাঁচ বা টাইপ তৈরী করেন?

উঃ পঞ্চানন কর্মকার

৩বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন সাহেবের নাম জড়িত?

উঃ অ্যান্ডরুজ সাহেব

কোন বছর শ্রীরা্মপুর মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়?

ঊঃ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে

শ্রীরা্মপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা কোনটি?

উঃ সমাচার দর্পণ( ১৮১৮ খ্রীঃ)

ঢাকা প্রেস কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উঃ ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে

চীনে কবে মুদ্রণ শিল্পের আবিষ্কার হয়?

উঃ ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে

বোম্বাইয়ে কবে প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয়?

উঃ১৬৭০ খ্রিস্টাব্দে

কে কবে চুঁচুড়ায় প্রথম মূদ্রণ যন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে?

উঃচার্লস উইলকিনস ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে

১০ বাংলার প্রথম সংবাদপত্র কোনটি?

উঃ দিগদর্শন (১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে)

১১ বাংলার ক্যাসটন কাকে বলা হয়?

উঃ চার্লস উইল্কিনসন

১২ আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত ভারতের প্রাচীন প্রতিষ্ঠান কোনটি?

উঃ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অফ সায়েন্স

১৩ আই সি এস এঁর নিজস্ব পত্রিকার নাম কী ছিল?

উঃ ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ফিজিক্স

১৪ কে বেঙ্গল কেমিকেলস প্রতিষ্ঠা করেন?

উঃ আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়

১৫ বর্তমানে কলেজ অফ ইঞ্জিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলোজি কোথায় অবস্থিত?

উঃযাদবপুরে

১৬ কে কবে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন?

উঃস্যার উইলিয়াম জোনস ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায়

১৭ কে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি নিযুক্ত হন?

উঃ রাসবিহারী ঘোষ

১৮ কে বিশ্বভারতী বিস্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সঠিক উত্তরটি বেছে লেখো

১ মুদ্রণ যন্ত্রে সর্বপ্রথম বাংলা ছাপা হয়রোমান হরফে

বাংলা ভাষায় প্রথম ছাপা বই হলঅন্নদামঙ্গল (মাধ্যমিক- ১৮)

কলকাতায় প্রথম মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেনজেমস অগাস্টাস হিকি

উইলিয়াম কেরি ছিলেনবাংলার শিক্ষক

৫বটতলা প্রকাশণী সংস্থা থেকে প্রকাশিত হলনববাবু বিলাস

সিটি বুক সোসাইটিপ্রতষ্ঠা করেনযোগীন্দ্রনাথ সরকার

দিগদর্শণসমাচার দর্পণপত্রিকার সম্পাদক ছিলেনমার্শ্মম্যান

৮এশিয়ার প্রথম ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়শ্রীরামপুরে

ছাপাখানার প্রথম বাঙালি ব্যবসায়ী হলেনগঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য

১০ প্রথম সচিত্র বাংলা বইয়ের নামঅন্নদামঙ্গল

১১ বাঙ্গালীর লেখা প্রথম বাংলা ছাপা বই হলপ্রতাপাদিত্য চরিত্র

১২বর্ণমালাগ্রন্থটি প্রকাশ করেস্কুল বুক সোসাইটি

১৩শিশুশিক্ষাগ্রন্থটি রচনা করেনমদনমোহন তর্কালঙ্কার

১৪ বর্ণ পরিচয় প্রকাশিত হয়েছিল১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে

১৫ ভারতে হাফটোন প্রিন্টিং পদ্ধতি প্রবর্তন করেনউপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (মাধ্যমিক- ১৭)

১৬ বাংলাদেশে প্রথম কালার প্রিন্টিং প্রবর্তন করেনউপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

১৭ A Grammar of the Bengal Language’ গ্রন্থটি রচনা করেননাথানিয়েল ব্রাসি হালয়েড

১৮ A Grammar of the Bengal Language’ গ্রন্থটি রচিত হয়১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে

১৯ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা প্রথম গ্রন্থ হলছেলেদের রামায়ণ

২০লাইনো টাইপতৈরি করিয়েছিলেনসুরেশ্চন্দ্র মজুমদার

২১ ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স গড়ে ওঠে১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে

২২ IACS প্রতিষ্ঠা করেনডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার

২৩ IACS এঁর প্রথম অধিকর্তা হলেনপ্যারীমোহন মুখোপাধ্যায়

২৪ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অফ সায়েন্সএর যে বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেনসি ভি রমন (মাধ্যমিক- ১৮)

২৫ বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন যে বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার তিনি হলেনগোলক চন্দ্র নন্দী

২৬ কলকাতার বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ছিলস্বদেশি আন্দোলন

২৭ বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেনজগদীশ চন্দ্র বসু

২৮ কে প্রথম জাতীয় শিক্ষা কথাটি ব্যবহার করেন?-প্রসন্নকুমার ঠাকুর

২৯ জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সভাপতি ছিলেনসত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর

৩০ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে

৩১ প্রথম ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়গোলক চন্দ্রকে

৩২বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউটএঁর প্রথম অধ্যক্ষ হলেনঅরবিন্দ ঘোষ

৩৩ বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে

৩৪বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউটপ্রতিষ্ঠিত হয়১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে (মাধ্যমিক- ১৯)

৩৫অব্যক্তগ্রন্থটি রচনা করেনজগদীশ চন্দ্র বসু

৩৬ বিশ্বভারতী বিস্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেনরথীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর ( নম্বর)

কবে কীভাবে বাংলার ছাপার অক্ষর ব্যবহৃত হয়

অথবা , বাংলা ছাপাখানার ইতিহাসে ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ কেন

উঃ  ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাসি হ্যালহেড ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারী বা ইংরেজদের বাংলা শিক্ষার জন্য ইংরেজি ভাষায় ‘ A Grammar of the Bengal Language ‘ নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন । এই গ্রন্থের মোট পৃষ্ঠার চারভাগের একভাগ অংশে তিনি উদাহরণরূপে কৃত্তিবাস , কাশী দাস ও ভারতচন্দ্রের রচনা থেকে উদ্ধৃত্তি তুলে ধরতে বাংলা হরফ ব্যবহার করেন । এইভাবে প্রথম বাংলা মুদ্রণ বা ছাপার কাজ শুরু হয় ।

বাংলায় ছাপাখানা উদ্ভবের সহায়ক উপাদানগুলি কী ছিল ?

 অথবা , বাংলাদেশে ছাপাখানা প্রসারের কারণ কী

উঃ বাংলায় ছাপাখানা উদ্ভবের সহায়ক উপাদানগুলি হল ইংরেজ কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা ও রেগুলেটিং অ্যাক্ট ( ১৭৭৩ খ্রি . ) প্রবর্তনের ফলে বাংলায় বাংলা ভাষায় সরকারি কাজকর্ম ও সরকারি নির্দেশের প্রয়োজন দেখা দেয় । তৎকালীন গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলা ভাষায় মুদ্রণ বা ছাপার জন্য সরকারি ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেন । চার্লস উইলকিনস্ বাংলা মুদ্রণের জন্য বাংলা হরফ নির্মাণ করেন ।

চার্লস উইলকিনস বিখ্যাত কেন

উঃ প্রাচ্যবাদী পণ্ডিত চার্লস উইলকিনস্ বিখ্যাত , কারণ  তিনি পঞ্চানন কর্মকারের সহযোগিতায় বাংলা মুদ্রাক্ষর খোদাই এবং অক্ষর ঢালাই – এর কাজ করেন । তাঁর তৈরি বাংলা মুদ্রাক্ষরের সাহায্যেই হ্যালহেড তাঁর বাংলা গ্রামার বইটিতে উদাহরণরূপে বাংলা মুদ্রণের ব্যবস্থা করেন । তাই তিনি ‘ বাংলার গুটেনবার্গ ‘ নামে পরিচিত ।

বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের ভূমিকা কী ছিল

উঃ পঞ্চানন কর্মকার বিখ্যাত ছিলেন , কারণ—   বাংলা মুদ্রাক্ষর তৈরির ক্ষেত্রে উইলকিনসের সহযোগী ছিলেন হুগলি নিবাসী মুদ্রাক্ষর শিল্পী পঞ্চানন কর্মকার । তাঁর তৈরি মুদ্রাক্ষর হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণে এবং পরবর্তীকালে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ‘ কর্নওয়ালিশ কোড ‘ – এর বাংলা সংস্করণেও ব্যবহৃত হয় ।তাঁর প্রচেষ্টাতেই বাংলা হরফ নির্মাণ একটি স্থায়ী শিল্পে পরিণত হয় ।

শ্রীরামপুর ত্রয়ীবিখ্যাত কেনঅথবা , শ্রীরামপুর ত্রয়ী কারা

উঃ শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি , জে . মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড একত্রে ‘ শ্রীরামপুর এয়ী ’ নামে পরিচিত । এঁরা ছিলেন খুব বিখ্যাত , কারণ এঁদের উদ্যোগে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে । এঁরা ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠা করলে বাংলায় মুদ্রণ শিল্পেরও বিকাশ ঘটে ।

ছাপা বই শিক্ষার প্রসারে কী ভূমিকা নিয়েছিলঅথবা , ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের দুটি সম্বন্ধ লেখো  

উঃ ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের দুটি সম্বন্ধ হল  বাংলায় ছাপাখানার উদ্ভবের আগে জ্ঞান বা শিক্ষাজগৎ ছিল হাতে লেখা পুথি বা মুখস্থবিদ্যার উপর নির্ভরশীল, কিন্তু ছাপা বইয়ের ফলে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ জ্ঞান অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং স্কুল – কলেজ শিক্ষাসহ গণ শিক্ষার প্রসার ঘটে ।ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ , শ্রীরামপুর মিশন , স্কুল বুক সোসাইটির উদ্যোগে বাংলায় পাঠ্যপুস্তক রচনা ও পরিবেশনার কাজও শুরু হয় ।

ছাপাখানা কীভাবে গণশিক্ষার প্রসারে সাহায্য করে ?

উঃ ছাপাখানার ফলে গণশিক্ষারও প্রসার ঘটে কৃত্তিবাসী রামায়ণ , কাশীদাসী মহাভারত প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থ, বিচিত্র ধর্মী বিষয়ের ওপর রচিত গ্রন্থ ,‘ সমাচারদর্পণ ‘ ও ‘ সংবাদ প্রভাকর ‘ – এর মতো বাংলাভাষায় প্রকাশিত পত্রপত্রিকা মানুষের মধ্যে জ্ঞানের ও শিক্ষার প্রসার ঘটায় ।

হিকি বেঙ্গল গেজেটকী

উঃ ছাপাখানার উদ্ভব বাংলায় সংবাদপত্রের যুগের সূচনা করেছিল এবং এরই পরিণতি ছিল জেমস অগাস্টাস হিকি কর্তৃক ‘ হিকি’জ বেঙ্গল গেজেট প্রকাশ । এটি ছিল চার পাতার সাপ্তাহিক পত্রিকা যার প্রথম দশটি সংখ্যা কোম্পানির প্রেস থেকে ছাপা হয়েছিল । এটি ছিল জেমস অগাস্টাস হিকির দ্বারা সম্পাদিত সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ।

হিকির ছাপাখানা বিখ্যাত কেন

উঃ কলকাতা ব্যক্তিগত মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত জেমস অগাস্টাস হিকির ছাপাখানা ( ১৭৮০ খ্রি . ) ছিল বিখ্যাত , কারণ—   হিকির কথায় তিনি ছিলেন সম্মানীয় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামরিক প্রাক্তন ( late ) মুদ্রাকর , কারণ তাঁর ছাপাখানায় কোম্পানির সামরিক বিল ও বাণিজ্যিক বাট্টা সংক্রান্ত কাগজপত্র ছাপানো হত । ভারতের প্রথম সংবাদপত্র ‘ হিকিজ গেজেট ‘ ( চার পাতার সাপ্তাহিক পত্রিকা ) এর প্রথম দশটি সংখ্যা ‘ কোম্পানীর প্রেস ’ – এ ছাপানো হলেও পরে তিনি নিজের এই ছাপাখানা থেকেই এই পত্রিকা প্রকাশ করেন ।  এই ছাপাখানাকে কেন্দ্র করেই ব্যবসায়ী – মুদ্রণকারী হিকি ‘ সাংবাদিক – হিকি’তে পরিণত ( trader printer turned journalist ) হয় ।

১০ ছাপাখানার প্রসারে স্কুল বুক সোসাইটি বিখ্যাত কেনো

উঃ ছাপাখানার প্রসারে স্কুল বুক সোসাইটি বিখ্যাত , কারণ—  ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ( ১৮১৭ খ্রি . ) স্কুল বুক সোসাইটির উদ্দেশ্য ছিল অল্প খরচে শিশু ও শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা । ডেভিড হেয়ার আমৃত্যু স্কুল বুক সোসাইটির মাধ্যমে বাংলা পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজে ব্রতী ছিলেন ।এই সোসাইটি নিজের ছাপাখানার পাশাপাশি শ্রীরামপুর মিশন প্রেস সহ অন্যান্য প্রেসেও বই ছাপানোর ব্যবস্থা করেছিল ।

১১ ছাপাখানার ইতিহাসে বিদ্যাসাগরের নাম স্মরণীয় কেন ?

উঃ ছাপাখানার ইতিহাসে বিদ্যাসাগরের ( ১৮২০-১৮৯০ খ্রি . ) নাম স্মরণীয় , কারণ   সংস্কৃত পন্ডিত ও সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ এবং শিক্ষাদরদি ও মানবতাবাদী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন ১৮৫০ – এর দশকে বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ।বন্ধু মদনমোহন তর্কালংকারের সঙ্গে তিনি যৌথভাবে ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটে ‘ সংস্কৃত যন্ত্র ‘ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন । পরবর্তীকালে তিনি সংস্কৃত যন্ত্রের একক মালিক হন । এবং এখান থেকে ‘ বর্ণপরিচয় ‘ প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশ করে শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ।

১২ প্রকাশনা জগতেবর্ণপরিচয় ‘ – এর গুরুত্ব কী

উঃ প্রকাশনা জগতে ‘ বর্ণপরিচয় ‘ – এর গুরুত্বগুলি হল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘ বর্ণপরিচয় ছিল একটি শিশুপাঠ্যপুস্তক যা আজও জনপ্রিয় । এখানে বাংলা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ নির্দিষ্ট করা হয় । এই বইয়ে ব্যবহৃত বাংলা হরফ প্রকাশনা জগতে একটি আদর্শ হরফ ব্যবস্থার প্রবর্তন করে ।

১৩ বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্ব কী ?

উঃ উনিশ শতকে ছাপাখানা জগতে ১৮৪০-১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে কলকাতার চোরবাগান , শোভাবাজার , দর্জিপাড়া , জোড়াসাঁকো প্রভৃতি স্থান জুড়ে যেসব প্রকাশনা চলত তা বটতলার প্রকাশনা নামে পরিচিত । এর দিকগুলি হল -সস্তায় বিচিত্র বিষয় ও বিচিত্র রকমের ধর্মকথা ও অশ্লীল কথাযুক্ত বাংলা বই ছাপা ছিল এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য । এই প্রকাশনার ক্ষেত্রে বিখ্যাত প্রকাশক ছিলেন । বিশ্বম্ভর দেব ও ভবাণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এঁদের প্রকাশিত পৌরাণিক ঐতিহাসিক গ্রন্থ সমকালীন বাবুসমাজ সহ শিক্ষিত মানুষের জ্ঞান পিপাসা মেটাতে সাহায্য করেছিল ।

১৪ ছাপাখানা প্রবর্তনের গুরুত্ব কী

উঃ বাংলায় ছাপাখানা প্রবর্তনের ফলে  বাংলা ভাষায় জ্ঞানের এবং শিক্ষার বিস্তার ঘটে ।ছাপাখানা ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে কলকাতা কেন্দ্রিক নতুন নতুন পেশার উদ্ভব ঘটে ।বাংলার সমাজ ও ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্নধর্মী পত্রপত্রিকা ও সাহিত্যের বিকাশ হয় ।

১৫ ছাপাখানা জগতে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী বিখ্যাত কেন

উঃ বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও চিত্রকর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ( ১৮৬৩-১৯১৫ খ্রি . ) ছাপাখানা জগতে বিখ্যাত ছিলেন , কারণ তাঁর রচিত ‘ ছেলেদের রামায়ণ ‘ গ্রন্থটির মুদ্রণ তাঁর পছন্দ না হওয়ায় তিনি ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে একটি ছাপাখানা ও প্রকাশনা সংস্থা খুলেছিলেন যা পরবর্তীকালে ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স ‘ নামে পরিচিত হয় ( ১৮৯৫ খ্রি . ) । তিনি ছাপাখানার জন্য বিভিন্ন নতুন ও উন্নত পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন । যেমন- হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং , রে – টিন্ট সিস্টেম ।

১৬ ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স সম্পর্কে কী জান?

উঃ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীকালে ‘ ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স ‘ নামে পরিচিত হয় ( ১৮৯৫ খ্রি . ) । বিদেশি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এখানে হাফটোন ব্লকে ছাপা হত ; তিন – চার রকম রং ব্যবহার করে ছোটোদের জন্য মজার বই প্রকাশ করা ছিল এই প্রকাশনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।এই প্রকাশনা থেকেই ছোটোদের পত্রিকা ‘ সন্দেশ ‘ প্রকাশিত ( ১৯১৩ খ্রি . ) হয়েছিল ।

১৭ ব্রিটিশ শাসনপর্বে সার্ভে বা জরিপ ব্যবস্থার গুরুত্ব কী ?

উঃ ব্রিটিশ শাসনপর্বে সার্ভে বা জরিপ ব্যবস্থার গুরুত্বগুলি হল -ব্রিটিশ শাসনপর্বে ফ্রাঙ্কল্যান্ড ও হগ্‌ ক্যামেরন ২৪ পরগনার জমি জরিপ করেন এবং ১৭৭০ – র দশকে জেমস রেনেল বাংলার নদীপথগুলি জরিপ করে মোট ১৬ টি মানচিত্র তৈরি করেন । জরিপ ও মানচিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে এদেশের প্রাকৃতিক , বনজ ও জলজ সম্পদ চিহ্নিত করে এদেশকে শোষণের ব্যবস্থা করা হয় ।

১৮ রাধানাথ শিকদার কোন বিষয়ে খ্যাতিলাভ করেন ?

উঃ রাধানাথ শিকাদর যে বিষয়ে খ্যাতিলাভ করেন , তা হল  তিনি ছিলেন নব্যবঙ্গগোষ্ঠীর একজন সদস্য ও নিজ উদ্যোগে বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃত ।  তিনি ট্রিগোনোমেট্রিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কাজে নিযুক্ত হন ও হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের সর্বোচ্চতা পরিমাপ করেন , কিন্তু তাঁর পরিবর্তে জরিপ বিভাগের প্রধান জর্জ এভারেস্ট – এর কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় । রাধানাথ শিকদার পরবর্তীকালে জরিপ ও আবহাওয়া বিভাগের প্রধান কম্পিউটার বা গণক ও সুপারিন্টেন্ডেন্ট হন ।

১৯ শিবচন্দ্র নন্দী কেন বিখ্যাত ছিলেন

উঃ শিবচন্দ্র নন্দী বিখ্যাত ছিলেন , কারণ—  প্রথাগত শিক্ষালাভ না করলেও শিবচন্দ্র নন্দী নিজের চেষ্টায় পাশ্চাত্য শিক্ষা অর্জন করেন এবং ইংরেজদের অধীনে আলিপুর টাঁকশালে কেরানির চাকরি গ্রহণ করেন ।  ভারতে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার সময় শিবচন্দ্র ইংরেজদের এ ব্যাপারে সাহায্য করেন ও একাজে দক্ষতা অর্জন করেন । পরে ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজেই কলকাতা থেকে ডায়মন্ডহারবার পর্যন্ত অঞ্চলে টেলিগ্রাফ সংযোগ করেন ।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | ( ৮ নম্বর)

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে ছাপাখানার বিস্তারে সাহায্য করেছিল তা ব্যাখ্যা করো

উঃ প্রথম অংশ ছাপাখানার বিস্তার শ্রীরামপুর মিশন : বাংলায় ছাপাখানা ব্যবস্থার বিকাশের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস ।

মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠা : খ্রিস্টান মিশনারি উইলিয়াম কেরি বাংলা ভাষায় বাইবেল ছাপানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও (১৭৯৮ খ্রি ) তা প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় নিজেই ছাপাখানা প্রবর্তন করে ছাপানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন । ইতিমধ্যে শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠিত হলে ( ১৮০০ খ্রি . ) কেরি এখানেই শ্রীরামপুর মিশন প্রেস স্থাপন করেন । ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই এই ছাপাখানা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছাপাখানায় পরিণত হয় ।

মিশন প্রেসের উৎপাদন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের ছাপা বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

ক)‘ ধৰ্ম্ম পুস্তক ‘ : প্রাথমিক পর্বে কেরির সহযোগী অভিজ্ঞ ও দক্ষ মুদ্রাকর ওয়ার্ড এবং পঞ্চানন কর্মকার কলকাতা থেকে সংগৃহীত হরফ এবং কিছু পাটনাই ও বিদেশি কাগজ সহযোগে ছাপার কাজ শুরু করেন ।

নিউ টেস্টামেন্টের প্রথম অধ্যায়টির বাংলা অনুবাদ করে কেরি ১০৭ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট ‘ মঙ্গল সমাচার মাতিউর রচিত নামে প্রকাশ করেন । ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে আটশোরও বেশি পৃষ্ঠাযুক্ত ‘ ধৰ্ম্মপুস্তক ‘ বা বাংলা বাইবেল প্রকাশ করেন ।

অন্যান্য বই : শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে রামরাম বসুর রচিত হরকরা ‘ ও ‘ জ্ঞনোদয় ‘ নামক দুটি গ্রন্থ ( আগস্ট সেপ্টেম্বরে , ১৮০০ খ্রি . ) মুদ্রিত হয় । ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই প্রেসে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের ‘ বত্রিশ সিংহাসন ‘ ( ১৮০২ খ্রি . ) , 8 খণ্ডে কাশীরাম দাসের ‘ মহাভারত ‘ ( ১৮০১-০৩ ) ও পাঁচ খণ্ডে কীর্তিবাসের ‘ রামায়ণ ‘ ( ১৮০২-০৩ ) প্রভৃতি সহ ৪০ টি বিভিন্ন ভাষায় ২,১২,০০০ কপি বই মুদ্রিত হয় ।

) পাঠ্যপুস্তক : শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকও মুদ্রিত হয়েছিল । এই সব পুস্তকের রচয়িতা ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার , রামরাম বসু , চণ্ডীচরণ মুন্সী , হরপ্রসাদ রায় প্রমুখ । উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে , ধর্মীয় উদ্দেশ্যে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস স্থাপিত হলেও তার উৎপাদনে ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়ও ছিল ।

স্কুল বুক সোসাইটির উদ্যোগে শিক্ষার বিস্তারকে তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে

উঃ উনিশ শতকে খ্রিস্টান মিশনারি ও ব্যক্তিগত এবং সরকারি উদ্যোগে শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি ছাপাখানা থেকে উৎপাদিত গ্রন্থসমূহের মাধ্যমেও শিক্ষার বিস্তার ঘটে । ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘ স্কুল বুক সোসাইটি’র ( ১৮১৭ খ্রি . ) উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষায় স্কুল পাঠ্য পুস্তক ছাপানো এবং শিক্ষার্থীদের কাছে তা সরবরাহ করা । এর বিভিন্ন দিকগুলি হল –

নিজস্ব ছাপাখানা : স্কুল বুক সোসাইটি শিক্ষার বিস্তারের উদ্দেশ্যে কলকাতার সার্কুলার রোডে নিজস্ব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ছাড়া ও শ্রীরামপুর মিশন প্রেস সহ অন্যান্য প্রেসেও বই ছাপানোর ব্যবস্থা করেছিল ।

বাংলা ভাষার প্রাধান্য : এই সোসাইটি অন্যান্য ভাষার পুস্তকের পাশাপাশি বাংলা ভাষাতে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করে । এই সোসাইটি প্রথম চার বছরে ( ১৮১৭-২১ খ্রি . ) বাংলা ভাষাতে ১৯ টি বইয়ের ৭৯,৭৫০ টি কপি মুদ্রণ ও বিপননের ব্যবস্থা করে ।

মুদ্রণের মানোন্নয়ন : বাংলা ভাষার উন্নতিসাধন এবং বাংলা মুদ্রণের মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে এই সোসাইটির উদ্যোগ ছিল প্রশ্নাতীত । বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে ইংরেজি প্রথানুযায়ী যতিচিহ্নের ব্যবহারের পাশাপাশি বাংলা গ্রন্থের মুদ্রণে ছবি , মানচিত্র , নকশার ব্যবহার শুরু করে ।

জ্ঞানচর্চার প্রসার : বাংলার ছাপাখানার ইতিহাসে স্কুল বুক সোসাইটির উদ্যোগে বাংলায় ইতিহাস , ভূগোল , জ্যোতির্বিদ্যা পদার্থবিদ্যা , অভিধান , ব্যাকরণ প্রভৃতি বিষয়ে বিশুদ্ধ জ্ঞানের চর্চা শুরু হয় । বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকের প্রবর্তনের ফলে শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের কাছে পাশ্চাত্যের জ্ঞানজগতের দরজা উন্মোচিত হয় ।

উনিশ শতকের প্রথম তিন দশকে বাংলার মিশনারি প্রেসগুলির মুদ্রণ ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করো এই পর্বের অন্যান্য ছাপাখানাগুলির বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করো

উঃ উনিশ শতকের শুরুতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগেও বাংলায় ছাপাখানার বিস্তার ঘটেছিল ; যেমন –

কলকাতার ব্যাপটিস্ট মিশন : শ্রীরামপুর মিশনের নবীন গোষ্ঠী এই মিশন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইউ কেরি , উইলিয়াম পিয়ার্স । প্রমুখ কলকাতার সার্কুলার রোডে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন ( ১৮১৮ খ্রি . ) । এই প্রেস স্কুল বুক সোসাইটির বরাত মতো যেমন বই ছেপেছিল , তেমনি তারা বাংলা মুদ্রণের উন্নতির জন্যও চেষ্টা করেছিল ।

চার্চ মিশন প্রেস : আমহার্স্ট স্ট্রিটের চার্চ মিশন প্রেসে ছাপা উল্লেখযোগ্য বই হল ইংল্যান্ডে ও ঐর্লন্ডে সংস্থাপিত মণ্ডলীর সাধারণ প্রার্থনা ‘ ( ১৮২২ খ্রি . ) । এই বইয়ে ফুলস্টপ সহ বিভিন্ন ইংরেজি যতি – চিহ্নও ব্যবহৃত হয়েছিল ।

বিশপস্ কলেজ প্রেস : শিবপুরের বিশপস্ কলেজ প্রেস ছিল আর – একটি উল্লেখযোগ্য প্রেস । ধর্মীয় পুস্তকের পাশাপাশি এখানে ছাপা বিভিন্ন ধরনের বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বই হল মর্টনের বাংলা ইংরেজি অভিধান ( ১৮২৮ খ্রি . ) ।

উনিশ শতকের শুরুতে ছাপাখানার জগতে খ্রিস্টান মিশনারিদের পাশাপাশি বেশ কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগও চোখে পড়ে ।

ছাপাখানা : ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের আগে প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত ছাপাখানাগুলি হল— পটলডাঙার সংস্কৃত যন্ত্র , আড়পুলি লেনে হরেন্দ্র রায়ের ছাপাখানা , শোভাবাজারের বিশ্বনাথ দেবের ছাপাখানা , বাঙালি প্রেস প্রভৃতি । এ ছাড়া বউবাজারের লেবেল্ডর সাহেবের ছাপাখানা , শ্রীরামপুরের নীলমণি হালদারের ছাপাখানা ছিল বিখ্যাত ।

প্রকাশনা : এই সমস্ত ছাপাখানা থেকে বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল । হিন্দুস্থানি প্রেস থেকে ‘ ঔষধসার সংগ্রহ ‘ ( ১৮১৯ খ্রি . ) , বাঙ্গালি প্রেস থেকে রামমোহন রায়ের ‘ কঠোপনিষৎ ‘ ( ১৮১৭ খ্রি . ) , হরচন্দ্র রায়ের আড়পুলি লেনের প্রেস থেকে বিভিন্নরকম ধর্মীয় বিশ্বনাথ দেবের প্রেস থেকে রাধাকান্ত দেবের ‘ বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থ ‘ ( ১৮২১ খ্রি . ) প্রকাশিত হয় । লিথোগ্রাফের প্রবর্তন ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাপাখানার বিস্তারের একটি দিক ছিল ‘ লিথোগ্রাফিক ছাপা’র প্রবর্তন । এই ধরনের ছাপা ব্যবস্থায় ছবি , নকশা , মানচিত্র আঁকা সম্ভব হয় ।

জগদীশচন্দ্র বসুর বিজ্ঞান গবেষণা উল্লেখ করেবসু বিজ্ঞান মন্দিরপ্রতিষ্ঠা ব্যাখ্যা করো  

উঃ ভূমিকা : উনিশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাঙালির বিজ্ঞান সাধনা ও বিজ্ঞান গবেষণার সূচনা হয় এবং এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য গবেষক ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু ( ১৮৫৮-১৯৩৭ খ্রি . ) ।ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপকরূপে যোগদান করেন ( ১৮৮৫ খ্রি . ) । এই কলেজে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি কলেজের মাত্র ২৪ বর্গফুট ঘরেই বিজ্ঞান গবেষণাও করতে থাকেন । তাঁর গবেষণার তিনটি পর্যায় ছিল — প্রথম পর্যায়ে ‘ তড়িৎ – চুম্বকীয় তরঙ্গ ‘ সম্পর্কে গবেষণা করেন ও ‘ বেতার যন্ত্র আবিষ্কার করেন । দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত গবেষণা করেন এবং তৃতীয় পর্যায়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী সংক্রান্ত গবেষণা করেন । তিনি উদ্ভিদের স্নায়বিক ক্রিয়াকলাপ ও বৃদ্ধি মাপার জন্য ‘ ক্রেস্কোগ্রাফ ‘ নামক একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেন ।

বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা : জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর তড়িৎ – চুম্বকীয় তরঙ্গ সংক্রান্ত গবেষণায় উদ্ভূত নতুন তত্ত্ব ও তথ্যের কথা ইংল্যান্ডের রয়্যাল ইন্সটিটিউশনে বক্তৃতার মাধ্যমে প্রকাশ করেন । এরপর তিনি ইংল্যান্ড , ফ্রান্স , জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন । এই সময়েই রয়্যাল সোসাইটির বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা ভারত সরকারের কাছে জগদীশচন্দ্র বসুর গবেষণার জন্য একটি উন্নতমানের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার অনুরোধ জানান । কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি । প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর গ্রহণের পর জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর বাড়িতেই ছোটো গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করে গবেষণার কাজ শুরু করেন । এর পাশাপাশি তিনি তাঁর নিজের ও দেশের স্বার্থে একটি বৃহৎ গবেষণাগার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন । শেষপর্যন্ত তাঁর নিজস্ব অর্থ ও সংগৃহীত ১১ লাখ টাকা অনুদানের অর্থে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘ বসু বিজ্ঞান মন্দির ‘ ( ২৩ নভেম্বর , ১৯১৭ ) ।

মূল্যায়ন : জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন একজন সফল বাঙালি বৈজ্ঞানিক এবং উদ্যোগপতি । তাঁর প্রতিষ্ঠিত বসু বিজ্ঞান মন্দির হয়ে ওঠে আধুনিক ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার ।

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অব সায়েন্স বা ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞানসভা সম্বন্ধে আলোচনা করো।

উঃ ভারতে বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স-এর প্রতিষ্ঠা (২৯ জুলাই, ১৮৭৬ খ্রি.)।

প্ৰতিষ্ঠা : বিখ্যাত চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাফের সহযোগিতায় কলকাতার বউবাজার স্ট্রিটে এই মৌলিক গবেষণাকেন্দ্রটি স্থাপন করেন। পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার নিয়মিত গবেষণা, বিজ্ঞানবিষয়ক বক্তৃতার আয়োজন প্রভৃতির জন্য এই ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞানসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব পত্রিকা ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্সসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় এখানকার বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজ প্রকাশিত হয়।

বিজ্ঞানীগণ : এখানে যাঁরা গবেষণার কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জগদীশচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী সি ভি রমন এখানেই তাঁর বিখ্যাত রমন এফেক্ট আবিষ্কার করেন। এই গবেষণার জন্য তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ডা. নীলরতন সরকার, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ ভারতীয় বিজ্ঞানসভার অধিকর্তারূপে কাজ করে গেছেন।

 গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : বিখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা এখানে একটি সক্রিয় গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে এক্স রশ্মি, আলোকবিজ্ঞান, চৌম্বকত্ব ইত্যাদি নানা বিষয়ে মৌলিক গবেষণার কাজকে উৎসাহ দিয়েছিলেন।

উপসংহার: পরবর্তীকালে যাদবপুরে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্সের

নতুন ক্যাম্পাস খোলার ব্যবস্থা করেন তদানীন্তন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায়। ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স-এর বৈজ্ঞানিকরা।

কারিগরি শিক্ষার প্রসারে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের অবদান কী ছিল?

উঃ বাংলা তথা ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প রূপে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট।

উদ্দেশ্য : বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গভঙ্গ-বিরোধীস্বদেশি আন্দো এর কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করতে জাতীয় উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে, বাংলা তথা ভারতে কারিগরি শিক্ষার বিকাশের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তোলা হয়।

প্রতিষ্ঠা : ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত আইনজীবী তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে কলকাতায় স্থাপিত হয় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানটি বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজের সঙ্গে একত্রিত হয়ে এর নতুন নাম হয় বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিক্যাল স্কুল। এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনে ডা. নীলরতন সরকার, রাসবিহারী ঘোষ, মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, উপেন্দ্রনাথ ঘোষ প্রমুখ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন |

পঠনপাঠন : প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এই শিক্ষা- প্রতিষ্ঠানটিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, প্রযুক্তিবিদ্যা, শিল্পপ্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয় পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।

জার্নাল প্রকাশ: বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা কারিগরি শিক্ষা ও প্রযুক্তির নতুন নতুন ভাবনাগুলিকে প্রচার করার জন্য টেকনামে একটি জার্নাল প্রকাশ করে। এই জার্নালের প্রথম সংখ্যা স্বদেশি যুগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিয়োজিত আত্মত্যাগী মহান ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়।

 বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর : বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিক্যাল স্কুল ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দেকলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলেজি নামে পরিচিতি লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এটির নামকরণ হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ।

সার্চ প্রভাব: বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের হাত ধরে বাংলায় কারিগরি ও প্রযুক্তিশিক্ষার অভূতপূর্ব প্রসার ঘটে। বহু শিক্ষিত যুবক এখান থেকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বনির্ভর ও সাবলম্বী হয়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ বহু বাঙালি যুবকের উদ্যোগে বাংলায় গড়ে ওঠে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সম্বন্ধে আলোচনা করো।

উঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাভাবনার চূড়ান্ত পরিণতি হল ১৯২১ খ্রিস্টাব্দেশান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েরপ্রতিষ্ঠা।

উদ্দেশ্য : রবীন্দ্রনাথের মতে যে-কোনো দেশেরশিক্ষার সাথে সেখানকার জীবনযাত্রার সংযোগ থাকে।কিন্তু তৎকালীন ভারতে পাশ্চাত্য ধাঁচে গড়ে ওঠাশিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করত শুধু কেরানি, দারোগাপ্রভৃতি, যদিও ভারতে চাষি, কুমোর প্রভৃতি পেশায়লিপ্ত অনেক মানুষই বসবাস করতেন। তাই রবীন্দ্রনাথ এমন এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন দেখেছিলেন যা ভারতের স্বতন্ত্র চরিত্রকে স্বীকৃতি জানাবে। এ ছাড়াও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষে মানুষে ভেদাভেদ মিটিয়ে তাদের এক মুক্ত পরিবেশে শিক্ষাচর্চার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন। বিদ্যালয়ের আবদ্ধ পরিবেশের বাইরে প্রকৃতির কোলে শিক্ষাপ্রদান ছিল তাঁর লক্ষ্য। এই উন্মুক্ত বাতাবরণের সূত্র ধরে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর মাধ্যমেপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সমন্বয়সাধন করতে চেয়েছিলেন।

প্রতিষ্ঠা : আশ্রমগুরু রবীন্দ্রনাথ গঠনের কথা প্রথম ব্যক্ত করেছিলেন কয়েকজন গুজরাটি ব্যবসায়ীর কাছে এবং এই বিদ্যালয় গঠনে দীনবন্ধু সি এফ অ্যান্ড্রুজ রবীন্দ্রনাথকে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে ঘুরে এসে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সভার আয়োজন করেন। এরপর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে মাত্র ১০ জন ছাত্র নিয়ে পণ্ডিত ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের সাহায্যে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন শুরু হয়। এর প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন বিধুশেখর ভট্টাচার্য |

দেশিবিদেশি পণ্ডিত : রবীন্দ্রনাথের আহবানে সাড়া দিয়ে বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনার জন্য ছুটে এসেছিলেন বহু দেশি-বিদেশি পণ্ডিত | ব্রজেন্দ্রনাথ শীল তাই বলেছেন, “বিশ্ব ভারতের কাছে এসে পৌঁছোবে সেই বিশ্বকে ভারতীয় করে নিয়ে আমাদের রক্তরাগে

রঞ্জিত করে ভারতের মহাপ্রাণে অনুপ্রাণিত করে আবার সেই প্রাণকে বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠা করবে।”

শিক্ষাচর্চা : বিশ্বভারতীতে বিজ্ঞান ও কলা উভয়ই বিষয়ই সমান সমাদর লাভ করে। বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বিভাগগুলি ছিল—পাঠভবন, শিক্ষাভবন, বিদ্যাভবন, রবীন্দ্রভবন, চিনাভবন, কলাভবন, সংগীত ভবন, হিন্দি ভবন। বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান ছিল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। বিশ্বভারতী | [

কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি : ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে। এর প্রথম আচার্য হন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ও প্রথম উপাচার্য হন রবীন্দ্র নন্দন, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বর্তমানেও শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষর রেখে চলেছে এই বিশ্ববিদ্যালয় ।

জাতীয় শিক্ষার প্রসারে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ভূমিকা কী ছিল?

উঃ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কর্মসূচি রূপে গড়ে ওঠে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন | এর পরিণতিতে স্থাপিত হয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ।

প্রতিষ্ঠা :৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ৯১ জন সদস্য নিয়ে জাতীয়

শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়। রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক, ব্রজেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী, সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী প্রমুখ যথাক্রমে জাতীয় শিক্ষার প্রসারের জন্য ১ লক্ষ, ৫ লক্ষ ও ২.৫ লক্ষ টাকা দান করেন।

উদ্দেশ্য : জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—[i] জাতীয় আদর্শের ভিত্তিতে ভাষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা। [ii] শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশসেবার মনোভাব গড়ে তোলা। [iii] নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো। [iv] মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন : জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে একাধিক জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয় বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এর প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, বিনয়কুমার সরকার, ডি ডি কোসাম্বি প্রমুখ পণ্ডিতগণ অধ্যাপনা করেন। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষা পরিষদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারউদ্যোগও গ্রহণ করে। বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা তথা শিক্ষাবিদ রাসবিহারী ঘোষ এই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি পদে নিযুক্ত হন|

ব্যর্থতা : জাতীয় শিক্ষা পরিষদ স্বদেশি আদর্শের ধাঁচে জাতীয় শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও শেষপর্যন্ত নানান কারণে এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে—

[i] জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের নেতিবাচক মনোভাব | [ii] জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত ডিগ্রি লাভের পরও শিক্ষার্থী সরকারি চাকরি পেত না। [iii] প্রবল অর্থসংকটের মুখোমুখি হয়ে জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির কাজকর্ম অনেকাংশেই বন্ধ হয়ে যায়। [iv] অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের একাংশ জাতীয় শিক্ষা অপেক্ষা ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থাকে বেশি কার্যকরী মনে

করত।

উপসংহার: তবে ব্যর্থতা সত্ত্বেও জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বহু

মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্ম দেয়। সর্বোপরি, বিকল্প শিক্ষাভাবনার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও জাতীয় শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

Click Here To Download  The PDF

RELATED POSTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Recent Posts

error: Content is protected !!