সংঘব্ধতার গোড়ার কথা (চতুর্থ অধ্যায়)
দশম শ্রেণী
সঠিক উত্তরটি বেছে লেখো
১ সিপাহি বিদ্রোহের প্রথম ঘটনাস্থল ছিল— ব্যারাকপুর
২ সিপাহি বিদ্রোহের সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন— লর্ড ক্যানিং
৩ ১৮৫৭ – র মহাবিদ্রোহের সময় দিল্লির মোগল সম্রাট ছিলেন— দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ
৪ সিপাহি বিদ্রোহের প্রথম শহিদ নামে পরিচিত— মঙ্গল পান্ডে
৫ ‘ পেশোয়া ‘ পদ লুপ্ত করেন গভর্নর জেনারেল – লর্ড ডালহৌসি
৬ দিল্লির শেষ মোগল সম্রাট ছিলেন – দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ
৭ তাঁতিয়া টোপি ছিলেন— মারাঠা ব্রাহ্মণ
৮ ঝাঁসির রানির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন— স্যার হিউরোজ
৯ মহাবিদ্রোহের পর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন – মহারানি ভিক্টোরিয়া
১০‘ ভাইসরয় ‘ শব্দের অর্থ কী ? – রাজপ্রতিনিধি
১১ কোম্পানির আমলে শেষ গভর্নর জেনারেল কে ? – লর্ড ক্যানিং
১২ মহাবিদ্রোহের পরে যে নীতিটি লোপ পায়— স্বত্ববিলোপ নীতি
১৩ ভারতে কোম্পানির শাসন কায়েম ছিল — ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ – ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ
১৪ কংগ্রেস – পূর্ব যুগকে ‘ সভাসমিতির যুগ ‘ বলেছেন – অনিল শীল
১৫ ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হল— বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা
১৬‘ বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা ‘ স্থাপিত হয়— ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে
১৭‘ বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা ‘ ছিল একটি – রাজনৈতিক সভা
১৮ ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় – ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে
১৯‘ আত্মীয়সভা ‘ প্রতিষ্ঠা করেন— রামমোহন রায়
২০‘ ব্রাহ্মসভা ‘ ছিল একটি – ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
২১ অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করে— ইয়ং বেঙ্গল
২২ ভারতে প্রথম সর্বভারতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটি হল – ভারতসভা
২৩ ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত সংবাদপত্রটির নাম ছিল— সংবাদ প্রভাকর
২৪‘ জমিদার সভা’র অন্যতম প্রতিষ্ঠিতা ছিলেন— প্রসন্ন কুমার ঠাকুর
২৫ জমিদার সভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের— ১৯ মার্চ
২৬ জমিদার সভা’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন – রাধাকান্ত দেব
২৭‘ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি ‘ প্রতিষ্ঠিত হয় – ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে
২৮ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয় – ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে
২৯ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের মুখপত্র ছিল – হিন্দু প্যাট্রিয়ট
৩০ ইন্ডিয়ান লিগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন – শিশিরকুমার ঘোষ
৩১ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন যে বিদ্রোহের পক্ষে ছিল – নীল বিদ্রোহের
৩২‘ দি বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি গড়ে ওঠে— ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে
৩৩‘ হিন্দুমেলা ‘ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যাঁর নাম জড়িত তিনি হলেন— নবগোপাল মিত্র
৩৪‘ জাতীয় মেলা ‘ বা ‘ হিন্দুমেলা ‘ প্রতিষ্ঠিত হয়— ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে
৩৫‘ হিন্দুমেলা’র অপর নাম – চৈত্রমেলা
৩৬‘ হিন্দুমেলার উপহার ‘ কবিতাটি রচনা করেন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৩৭‘ হিন্দুমেলা ‘ প্রবর্তন করেন— নবগোপাল মিত্র
৩৮ হিন্দুমেলার উত্তরসূরী ছিল— জাতীয় গৌরব সঞ্চারিণী সভা
৩৯ হিন্দুমেলা কতদিন চলেছিল ? – চোদ্দো বছর
৪০ ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা কে ? – দাদাভাই নওরোজি
৪১ ভারতসভা প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের— ২৬ জুলাই
৪২‘ ভারতসভা ‘ – র প্রথম সভাপতি ছিলেন— সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৩ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত ? – ব্যঙ্গচিত্র
৪৪‘ বর্তমান ভারত ’ প্রথম প্রকাশিত হয়— উদ্বোধন পত্রিকায়
৪৫ দেশীয় সংবাদপত্র আইন প্রবর্তিত হয়— ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে
৪৬ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতমাতা চিত্রটি এঁকেছেন— অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৪৭ ছিয়াত্তরের মন্বস্তরের পটভূমিকায় রচিত উপন্যাসটি হলো- আনন্দমঠ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১ সিপাহি বিদ্রোহ কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন ?
উঃ ‘ সিপাহি বিদ্রোহ ‘ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন ভারত সচিব আর্ল স্ট্যানলি ।
২ কাকে বিদ্রোহীরা ‘ হিন্দুস্থানের সম্রাট ‘ বলে ঘোষণা করে ?
উঃ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে বিদ্রোহীরা ‘ হিন্দুস্থানের সম্রাট ‘ বলে ঘোষণা করে ।
৩ ভারতের শেষ মোগল সম্রাট কে ছিলেন ?
উঃ ভারতের শেষ মোগল সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ।
৪ কী করার অপরাধে সিপাহি বিদ্রোহে অংশগ্রহণ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে কোথায় নির্বাসন দেওয়া হয় ?
উঃ সিপাহি বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করার অপরাধে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেওয়া হয় ।
৫ নির্বাসনকালে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের বয়স কত ছিল ?
উঃ নির্বাসনকালে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের বয়স ছিল বছর ।
৬ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কে ভারতের স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ বলে অভিহিত করেন ?
উঃ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে বিনায়ক দামোদর সাভারকার ভারতের স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ বলে অভিহিত করেন ।
৭ কার্ল মার্কস ১৮৫৭ – র বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে কী বলেছিলেন ?
উঃ কার্ল মার্কস ১৮৫৭ – র বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে বলেছিলেন এটি ছিল জাতীয় বিদ্রোহ ।
৮ মহাবিদ্রোহের একজন নেতার নাম লেখো ।
উঃ মহাবিদ্রোহের একজন নেতার নাম তাঁতিয়া টোপি ।
৯বিদ্রোহে বাঙালি ‘ গ্রন্থটি কার লেখা ?
উঃ‘ বিদ্রোহে বাঙালি ‘ গ্রন্থটি দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ।
১০মহারানির ঘোষণাপত্র করে প্রকাশিত হয় ?
উঃ মহারানির ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয় ১ নভেম্বর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ।
১১মহারানির ঘোষণাপত্রটি ভারতের কোথায় ঘোষিত হয় ?
উঃ মহারানির ঘোষণাপত্রটি ভারতের এলাহাবাদে ঘোষিত হয় ।
১২মহারানির ঘোষণাপত্র’টি এলাহাবাদে কে পাঠ করেন ।
উঃ মহারানির ঘোষণাপত্র’টি এলাহাবাদে পাঠ লর্ড ক্যানিং ।
১৩মহারানির ঘোষণাপত্রকে কী নামে অভিহিত করা হয় ?
উঃ মহারানির ঘোষণাপত্রকে ভারতীয় জনগণের ‘ ম্যাগনা কার্টা হিসেবে অভিহিত করা হয় ।
১৪ হিন্দুমেলার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন ?
উঃ হিন্দুমেলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
১৫ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
উঃঅ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৬জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি কে ছিলেন ?
উঃজাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি ছিলেন উমেশচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায় ।
১৭আনন্দমঠ উপন্যাসটি কার লেখা ?
উঃ ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাসটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা
১৮‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাস করে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ?
উঃ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাস ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
১৯‘ বন্দে মাতরম্ ‘ সংগীতটি কোন্ উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে ?
উঃ ‘ বন্দে মাতরম্ ‘ সংগীতটি ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে ।
২০‘ বন্দে মাতরম্ ‘ সঙ্গীতটি প্রথম কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?
উঃ‘ বন্দে মাতরম্ ‘ সঙ্গীতটি প্রথম বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।
২১ কে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের গুরু ’ বলেছেন ?
উঃ অরবিন্দ ঘোষ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের গুরু ’ বলেছেন ।
২২পরাধীন ভারতের ‘ জাতীয় সংগীত ‘ কোনটি ?
উঃ পরাধীন ভারতের ‘ জাতীয় সংগীত ‘ ছিল ‘ বন্দে মাতরম্ ‘ ।
২৩‘ বর্তমান ভারত ‘ কার লেখা ?
উঃ‘ বর্তমান ভারত ’ স্বামী বিবেকানন্দের লেখা ।
২৪‘ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ‘ কার লেখা ?
উঃ ‘ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ‘ স্বামী বিবেকানন্দের লেখা ।
২৫‘ বর্তমান ভারত ‘ প্রথম কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?
উঃ ‘ বর্ত্তমান ভারত ‘ পত্রিকায় প্রথম উদ্বোধন প্রকাশিত হয় ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (4 Marks)
১ সিপাহি বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল ?
উঃ এনফিল্ড রাইফেলের প্রবর্তন ছিল সিপাহি বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ । নতুন ধরনের এই বন্দুকের টোটায় মধ্যে গোরু ও শুকরের চর্বি মিশ্রিত থাকার গুজব রটালে ধর্মনাশের ভয়ে হিন্দু ও মুসলিম সিপাহিরা এই রাইফেল ব্যবহার করতে অস্বীকার করে । কিন্তু ইংরেজরা ভারতীয় সিপাহিদের দাবি না মানলে ব্যারাকপুরে মঙ্গল পান্ডের নেতৃত্বে তারা প্রকাশ্যে বিদ্রোহ শুরু করে ( ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ) ।
২ ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে কি সিপাহি বিদ্রোহ বলা সংগত ?
উঃ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে শুধুমাত্র সিপাহি বিদ্রোহ বলা যায় না , কারণ প্রথমত , ১৮৫৭ – র বিদ্রোহ ইংরেজ কোম্পানির ভারতীয় সিপাহিরা শুরু করলেও পরবর্তীকালে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকার জনগণ ব্যাপকভাবে এই বিদ্রোহে শামিল হয় । দ্বিতীয়ত , কয়েকটি স্থানে সিপাহিরা বিদ্রোহ না করলেও জনগণ বিদ্রোহ করেছিল এবং সামস্ত প্রভুরা যোগদান করেছিল ।
৩ ১৮৫৭ –র বিদ্রোহকে সামন্ততান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া বলা হয় কেন ?
উঃ১৮৫৭ – র বিদ্রোহে কিছু রাজ্যচ্যুত সামন্তরাজা ও ভূমিচ্যুত জমিদার ও তালুকদার নেতৃত্ব দিয়েছিল । এদের লক্ষ্য ছিল হৃত রাজ্য ও জমিদারি পুনরুদ্ধার । সামস্তশ্রেণির এই প্রয়াসকে বামপন্থী চিন্তাবিদ রজনীপাম দত্ত রক্ষণশীল ও সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলির অভ্যুত্থান বলে উল্লেখ করেছেন ।
৪ ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে ভারতে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলা হয় – কেন ?
উঃ প্রখ্যাত বিপ্লবী বিনায়ক দামোদর সাভারকার ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে ভারতের ‘ প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ ‘ বলে আখ্যায়িত করেছেন , কারণ প্রথমত , ১৮৫৭ – র বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী বিদ্রোহীরা মনেপ্রাণে ইংরেজ বিতাড়ন করতে চেয়েছিল । দ্বিতীয়ত , বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক একসঙ্গে লড়েছিল এবং দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ভারতের সম্রাট বলে মেনে নিয়েছিল । তৃতীয়ত , ইংরেজ – বিরোধী এত ব্যাপক আন্দোলন ইতিপূর্বে ভারতে আর হয়নি ।
৫ ১৮৫৭ – র মহাবিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ ’ বলা যায় না কেন ?
উঃ প্রখ্যাত বিপ্লবী বিনায়ক দামোদর সাভারকার ১৮৫৭ – র মহাবিদ্রোহকে ‘ ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম ‘ বলে অভিহিত করেছেন । কিন্তু ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার ও সুরেন্দ্রনাথ সেন এই মতকে অস্বীকার করে বলেছেন যে , ( ১ ) জনগণের অংশগ্রহণ সর্বত্র সমানভাবে ঘটেনি ; ( ২ ) মারাঠা , রাজপুত , শিখ , গোরখা প্রভৃতি জাতি বিদ্রোহ থেকে দূরে ছিল ; ( ৩ ) সে সময় জাতীয় চেতনার উন্মেষ হয়নি ; ( ৪ ) বিদ্রোহীরা নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থে বিদ্রোহ করেছিল — জাতীয় স্বার্থে নয় । তাই এই বিদ্রোহকে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলা যায় না ।
৬ মহাবিদ্রোহ দমনে সাহায্য করেছিল এমন কয়েকটি দেশীয় শক্তির নাম লেখো ।
উঃমহাবিদ্রোহ দমনে বেশ কিছু দেশীয় শক্তি ইংরেজদের সাহায্য করেছিল । এমন কয়েকটি দেশীয় শক্তি হল— গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া , কাশ্মীরের মহারাজা , হায়দ্রাবাদের নিজাম , যোধপুরের রাজা , গোরখা নেতা জং বাহাদুর প্রমুখ ।
৭ উনিশ শতককে ‘ সভাসমিতির যুগ ‘ ( Age of Association ) বলে অভিহিত করা হয় কেন ?
অথবা , সভাসমিতির যুগ কাকে বলে ?
উঃ জাতীয় চেতনা উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে ভারতবাসীর মনে দেশাত্মবোধের ধারণা জাগ্রত হয় এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য ভারতীয়রা সংঘবন্ধ আন্দোলনের তাগিদ অনুভব করে । এই উপলব্ধি থেকেই উনিশ শতকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু রাজনৈতিক সভাসমিতি গড়ে ওঠে । এই কারণে অধ্যাপক অনিল শীল উক্ত সময়কালকে সভাসমিতির যুগ ‘ বলে অভিহিত করেছেন ।
৮ সভাসমিতির যুগে রাজনৈতিক সভাগুলির বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ?
উঃ উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতে সভাসমিতির বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল প্রথমত , বাংলাতেই প্রথম সভাসমিতি গড়ে ওঠে এবং পরে বাংলার অনুকরণে ভারতের অন্যান্য স্থানে তা গড়ে ওঠে । দ্বিতীয়ত , এগুলি শুরুতে উচ্চবিত্ত ও অভিজাতকেন্দ্রিক হলেও ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর মধ্যবিত্ত শ্রেণির দ্বারা পরিচালিত হত । তবে এগুলিতে একারণেই সাধারণ মানুষের স্বার্থ ছিল উপেক্ষিত । তৃতীয়ত , এগুলি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল গোষ্ঠী স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্বার্থ বজায় রাখা এবং আঞ্চলিক ভিত্তিতে ভারতীয়দের দাবিদাওয়া পুরণের চেষ্টা করা ।
৯ বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার ’ লক্ষ্য কী ছিল ?
উঃ বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার লক্ষ্য ছিল প্রথমত , বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা করাই ছিল । এই সভার প্রাথমিক লক্ষ্য । দ্বিতীয়ত , পরবর্তীকালে এই সভা রাজনৈতিক সংস্থায় পরিণত হয় । এই সময় বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশদের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বা কার্যাবলি ভারতবাসীর কতটা হিতসাধন বা ক্ষতি করতে পারে তা পর্যালোচনা করা ।
১০ জমিদার সভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল ?
উঃ জমিদার সভা প্রতিষ্ঠার ( ১৮৩৮ খ্রি . ) উদ্দেশ্যগুলি হল— প্রথমত , বাংলা – বিহার – উড়িষ্যার জমিদার স্বার্থ রক্ষা করা ও জমিদারদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা । দ্বিতীয়ত , জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় এবং সরকার কর্তৃক নিষ্কর জমির বাজেয়াপ্তকরণ বিষয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা । তৃতীয়ত , ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রসার সাধন করা । বাস্তবেও দেখা যায় যে , ‘ বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা ‘ নিষ্কর জমির বাজেয়াপ্তকরণ বিষয়ে যে আন্দোলন শুরু করেছিল , ‘ জমিদার সভা ‘ সেই বিষয়েই নতুন করে জনমত গড়ে তোলে ।
১১ ইলবার্ট বিল বিতর্ক কী ? / ইলবার্ট বিল কী ?
Ans: ভারতীয় কোনো বিচারকের ব্রিটিশদের শাসন করার অধিকার ছিল না । লর্ড রিপনের শাসনকালে আইনসচিব ইলবার্ট একটি বিল দ্বারা ভারতীয় বিচারকদের এই অধিকার প্রদান করেন । একে ইলবার্ট বিল বলে ।
১২ উনিশ শতকে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ‘ভারতমাতা’ চিত্রটির কীরূপ ভূমিকা ছিল?
উঃ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ‘ভারতমাতা’ নামক চিত্রটি শিক্ষিত ও প্রগতিশীল ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তা বোধের প্রসারে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা নেয়। অবনীন্দ্রনাথ হিন্দুদের ধনসম্পদের দেবী লক্ষীর অনুকরণে চতুর্ভুজা বৈষ্ণব সন্ন্যাসিনীর পোশাক পরিহিতা ভারতমাতার চারহাতে বেদ, ধানের শিষ,জপের মালা ও শ্বেত বস্ত্র দান করেছেন। এইভাবে অবনীন্দ্রনাথ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের যুগে ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশিয়ানা ও জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।
১৩ ব্যঙ্গ চিত্র কেন আঁকা হয়? গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা কয়েকটি ব্যঙ্গ চিত্রের উদাহরণ দাও।
উঃ পরাধীণ ভারতে নানা কারণে ব্যঙ্গ চিত্র আঁকা হত, যেমন- প্রচলিত সামাজিক কুপ্রথা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা, তৎকালীন রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ত্রুটিগুলি জনসমক্ষে তুলে ধরা।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা বিভিন্ন চিত্রে ব্যঙ্গ করা হয়েছে এমন কয়েকটি বিষয় হল- পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুরাগী বাঙ্গালী বাবু, বাঙ্গালী নারীর বাংলার শাড়ী এবং ইউরোপের জুতো পরে ইউরোপীয় পুরুষের সঙ্গে নৃত্য, স্বামীর মত্ততা এবং তার স্ত্রীর আচরণ,জনৈক ব্রাক্ষণ ধর্মের প্রতি অনুরাগের পরিবর্তে মাংস, মদ ও মহিলায় অনুরোক্ত হওয়া প্রভৃতি।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (8 Marks)
১ সংক্ষেপে মহাবিদ্রোহের ( ১৮৫৭ খ্রি . ) চরিত্র বিশ্লেষণ করো ।
অথবা , মহাবিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো ।
উঃ ১৮৫৭ – র বিদ্রোহের সময়কাল থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ঐতিহাসিকরা এই বিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র বিশ্লেষণ করেছেন । ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতির বিভিন্ন দিকগুলি হল –
শুধুমাত্র সিপাহি বিদ্রোহ : ম্যালেসন , জন কে , স্যার জন লরেন্স , পি ই রবার্টস প্রমুখ ইংরেজ এই বিদ্রোহকে নিছক সিপাহি বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছু মনে করেন না । সমসাময়িক ভারতীয় লেখক স্যার সৈয়দ আহমদ খান , দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় , কিশোরচাঁদ মিত্র , হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রমুখও মনে করেছেন , সিপাহি ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের দ্বারা সংগঠিত এই বিদ্রোহে জনগণের সংযোগ ছিল গৌণ ; সিপাহিরা নিজেদের সুযোগসুবিধা আদায়ের জন্য বিদ্রোহ করেছিল ।
জাতীয় বিদ্রোহ : জে বি নর্টন , জনকে এবং ইংরেজ ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাফ প্রমুখ ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে ‘ জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন । কারণ , উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল এবং তারা মনেপ্রাণে ব্রিটিশ বিতাড়ন চেয়েছিল । সিপাহিদের দ্বারা মনোনীত শেষ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ হয়ে ওঠেন ভারতের জাতীয় সম্রাট , জাতীয়তার প্রতীক , হিন্দু – মুসলিম ঐক্যের প্রতীক ।
সামন্ততান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া : বামপন্থী চিন্তাবিদ রজনী পাম দত্ত , এম এন রায় প্রমুখ এই বিদ্রোহকে রক্ষণশীল ও সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলির অভ্যুত্থান বলে উল্লেখ করেছেন । অধ্যাপক সুশোভন সরকার ও এই বিদ্রোহের সামন্ততান্ত্রিক চরিত্র স্বীকার করে নিয়েছেন ।
সাম্প্রদায়িক আন্দোলন : সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে এর সূচনা ঘটেছিল বলে আলফ্রেড লায়াল প্রমুখ তৎকালীন অনেক ইংরেজ কর্মচারী ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে সাম্প্রদায়িক আন্দোলন বলে ব্যাখ্যা করেছেন ।
রমেশচন্দ্র মজুমদারের মত : ড . মজুমদারের মতে , এই বিদ্রোহ ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েনি । সকল শ্রেণির জনগণও এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেনি । তাই ১৮৫৭ – র তথাকথিত প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ না ছিল প্রথম , না ছিল জাতীয় , না ছিল স্বাধীনতার যুদ্ধ
ড . সেনের মতামত : ড . সুরেন্দ্রনাথ সেন – এর মতে , ১৮৫৭ – র বিদ্রোহ সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবে শুরু হলেও শেষপর্যন্ত তা গণবিদ্রোহে পরিণত হয় । দিল্লি , অযোধ্যা , বিহার প্রভৃতি অঞ্চলে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল সর্বাধিক এবং যেসকল অঞ্চলে জনগণের সমর্থন ছিল সেসব অঞ্চলের বিদ্রোহী নেতাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিবিপ্লব ঘটানো ।
উপসংহার : কেমব্রিজ ঐতিহাসিক সি এ বেইলির মতে , ১৮৫৭ – র ভারতীয় বিদ্রোহ কেবল একটি আন্দোলন নয় , এর মধ্যে কৃষক অভ্যুত্থান বা জাতীয় বিদ্রোহের মতো আরও অনেক কিছুই ছিল ।
২ ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলা যায় কি ?
উঃ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলার কারণগুলি হল –
ব্যাপকতা : পূর্ববর্তী বিদ্রোহগুলির তুলনায় ১৮৫৭ – র বিদ্রোহের ব্যাপকতা ও স্বতঃস্ফূর্ত গণসমর্থন ছিল ব্যাপক ।
সাম্প্রদায়িক ঐক্য : দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ছিলেন হিন্দু – মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্যের প্রতীক । এই ধর্মীয় ভাবাবেগ পরবর্তীকালে তা স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয় ।
পরিকল্পিত বিদ্রোহ : এই বিদ্রোহ আচমকা হঠাৎ ছিল না , এর পেছনে স্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল । সাহায্যের আশায় দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ পারস্যের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন ।
গণ – অভ্যুত্থান : জাতীয়তাবাদ বলতে আমরা যাই বুঝি না কেন বিদেশি শাসন থেকে মুক্তিলাভের জন্য গড়ে ওঠা গণ অভ্যুত্থানকে জাতীয় সংগ্রাম বলা যেতেই পারে ।
জাতীয় সংগ্রাম : ঐতিহাসিক কে পানিক্কর – এর মতে , ১৮৫৭ – র বিদ্রোহের নেতারা যদি নিজ নিজ অঞ্চলের স্বাধীনতার কথাও চিন্তা করে থাকেন , তবু তাঁরা যে জাতীয় সংগ্রামই করেছিলেন তা অস্বীকার করা যায় না ।
বিপক্ষে যুক্তি : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলা যায় না ,
কারণ— ( ১ ) বিদ্রোহীদের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য , পরিকল্পনা বা সংগঠন ছিল না । ( ২ ) ঐক্য বা বোঝাপড়া কেবলমাত্র সিপাহিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । ( ৩ ) সিপাহিদের সঙ্গে বিদ্রোহী নেতাদের তেমন যোগাযোগ ছিল না । ( ৪ ) বিদ্রোহের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও নেতাদের মধ্যে লক্ষ্য ও আদর্শের ফারাক ছিল এবং এটি জাতীয় স্বার্থে পরিচালিত হয়নি । উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় , একটি দেশের মুক্তিযুদ্ধে দেশের সমস্ত মানুষ অংশ নেবে এ কথা আশা করা যায় । না । এই বিদ্রোহে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যোগদান করেছিল , তাই একে জাতীয় বিদ্রোহ বলা হয়ে থাকে । তা ছাড়া বিদ্রোহীদের মধ্যে জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণা হয়তো ছিল না , কিন্তু ব্রিটিশ – বিরোধী মানসিকতার প্রভাব ছিল ।
উপসংহার : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ নিছক একটি কোনো বিদ্রোহ ছিল না । ভারতবাসীর মনে জাতীয়তা বোধ গড়ে তুলতে এই বিদ্রোহের যথেষ্ট ভুমিকা ছিল।
৩ ব্রিটিশ – বিরোধী জনমত গঠনে বাংলার সভা সমিতিগুলির বিবরণ দাও ।
উঃ দেশের স্বার্থরক্ষা ও সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য সংঘবদ্ধ আন্দোলন প্রয়োজন— ভারতীয়দের এই উপলব্ধি থেকেই উনিশ শতকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে , যেগুলি ব্রিটিশ – বিরোধী জনমত গঠনে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল, যেগুলি ব্রিটিশ – বিরোধী জনমত গঠনে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল । এইরূপ নানা সভাসমিতির মধ্যে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা , জমিদার সভা , হিন্দুমেলা ও ভারতসভা ছিল উল্লেখযোগ্য ।
বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা : ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে টাকির মুনশি কালীনাথ রায়চৌধুরি , প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং প্রসন্নকুমার ঠাকুরের যৌথ উদ্যোগে ‘ বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা ’ গড়ে ওঠে । এর বিভিন্ন সভায় ব্রিটিশদের ভালোমন্দ কাজের পর্যালোচনা করা হত । যোগেশচন্দ্র বাগলের মতে , এটি বাঙালি তথা ভারতবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ।
জমিদার সভা : ১২ নভেম্বর ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর , রাধাকান্তদেব ও প্রসন্নকুমার ঠাকুরের যৌথ প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে জমিদার সভা ( Land Holders Society ) । রাজেন্দ্রলাল মিত্রের মতে , এটি ছিল ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের অগ্রদূত । এই প্রতিষ্ঠান থেকেই জনসাধারণ সর্বপ্রথম নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দাবি আদায়ের শিক্ষা লাভ করে ।
হিন্দুমেলা : ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে নবগোপাল মিত্রের উদ্যোগে ‘ জাতীয় মেলা ’ গড়ে ওঠে , যা ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুমেলায় পরিণত হয় । দেশীয় সাহিত্য , শিল্প ও সংস্কৃতির যথার্থ বিকাশের মাধ্যমেই ভারত ও ভারতবাসীর প্রকৃত মঙ্গল সম্ভব — এই চিন্তা থেকেই জন্ম নেয় এই প্রতিষ্ঠানটি । জাতীয় সংস্কৃতি , জাতীয় শিল্প ও জাতীয় গৌরব বৃদ্ধি করা এবং এ বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করাই ছিল হিন্দুমেলার প্রধান কর্মসূচি ।
ভারতসভা : মধ্যবিত্ত শ্রেণির সদস্যদের নিয়ে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জুলাই সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় , আনন্দমোহন বসু ও শিবনাথ শাস্ত্রীর সহায়তায় কলকাতার অ্যালবার্ট হলে ভারতসভা প্রতিষ্ঠা করেন । এই সংগঠনে কোনো ইউরোপীয় বা জমিদার শ্রেণির সদস্য না থাকায় ভারতসভা সাধারণ ভারতবাসীর রাজনৈতিক সংগঠনের চরিত্রলাভ করে । এই সভাই সর্বপ্রথম ‘ হিন্দু – মুসলিম সম্প্রীতির ওপর জোর দেয় এবং নিম্নবর্গীয় মানুষদের গণ – আন্দোলনে শামিল করে । ভারতসভার নেতৃত্বে ব্রিটিশ প্রবর্তিত সিভিল সার্ভিস আইনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের বিরুদ্ধে , ইলবার্ট বিলের পক্ষে ব্যাপক আন্দোলন ও জনমত গড়ে ওঠে ।
উপরিলিখিত সংগঠনগুলি ছাড়াও ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি ( ১৪৩৯ ) , বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি ( ১৮৪৩ ) , ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ( ১৮৫১ ) , ইন্ডিয়ান লিগ ( ১৮৭৫ ) প্রভৃতি সভাসভাসমিতিগুলিও ব্রিটিশ – বিরোধী জনমত গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল । সঙ্গত কারণেই ঐতিহাসিক ড . অনীল শীল উনিশ শতককে সভাসমিতির যুগ ( Age of Associations ) বলে উল্লেখ করেছেন ।
৪ ‘ ভারতসভার প্রতিষ্ঠা ও ভূমিকা আলোচনা করো ।
অথবা , ভারতসভার লক্ষ্য কী ছিল ? জাতীয় আন্দোলনের উন্মেষে এই সভা কীভাবে সাহায্য করেছিল ?
উঃ ভারতসভা প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে প্রথমত , সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বুদ্ধিজীবী শ্রেণির নেতা উপলব্ধি করেছিলেন যে , দেশের বৃহত্তর জনগণের সংযোগে গণতান্ত্রিকভাবে সমিতি গঠন না করলে সরকার সেই সমিতির দাবিকে মূল্য দেবে না । দ্বিতীয়ত , ভারতে ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সমিতিগুলি ছিল রক্ষণশীল ও তাদের আচরণ ছিল অভিজাতসুলভ । তৃতীয়ত , সর্বভারতীয় স্তরে সমিতি গঠন ও আন্দোলন পরিচালনার মাধ্যমে ভারতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করা ।
ভারতসভার উদ্দেশ্য : ‘ ভারতসভা ‘ – র চারটি ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল , যেমন – ( ১ ) জনমত গঠন , ( ২ ) ভারতের সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য স্থাপন , ( ৩ ) হিন্দু – মুসলিম ঐক্য স্থাপন এবং ( ৪ ) রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে ভারতের জনসংযোগ ঘটানো । যাতে সাধারণ ভারতীয়রা বিপুল সংখ্যায় এই সংগঠনে যোগ দিতে পারে তার জন্য এর সদস্য চাঁদা দরিদ্রতম শ্রেণির জন্য এক টাকা হিসেবে ধার্য করা হয় । দ্বিতীয় অংশ , ‘ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতসভার ১২৪ টি শাখা গড়ে ওঠে এবং এগুলির মাধ্যমে ভারতসভা জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয় ।
ভারতসভার উল্লেখযোগ্য কার্যাবলি হল > সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত আন্দোলন ভারতসভা সর্বপ্রথম আন্দোলন গড়ে তোলে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস আইনের সংস্কারকে কেন্দ্র করে । এই আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৯ করলে ভারতসভা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় । সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত একটি সর্বভারতীয় প্রতিবাদপত্র লালমোহন ঘোষ মারফৎ ব্রিটিশ সংসদে পেশ করা হয় ।
লিটনের প্রতিক্রিয়াশীল আইনের বিরোধিতা : ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটন দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন জারি করে দেশীয় ভাষার সংবাদপত্রগুলির স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেন এবং ওই বছরেই অস্ত্র আইন জারি করে ভারতবাসীকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেন । কলকাতার টাউন হলে ‘ ভারতসভা ‘ — এই দুটি আইনের বিরুদ্ধে বিরাট বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ।
ইলবার্ট বিলের পক্ষে আন্দোলন : লর্ড রিপন – এর আমলে ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় বর্ণবৈষম্য দূর করার উদ্দেশ্য তাঁর আইন সচিব সি পি ইলবার্ট একটি বিল বা আইনের খসড়া রচনা করলে ভারতসভা এই বিলের পক্ষে আন্দোলন শুরু করে ।
মূল্যায়ন : ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার প্রথম জাতীয় সম্মেলন ‘ আহ্বান করেন । এর দু – বছর পর তিনি দ্বিতীয় ‘ জাতীয় সম্মেলন ‘ আহ্বান করেন , যা ছিল ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পূর্বাভাস । সুতরাং দেখা যায় , যে ভারতসভাই ছিল আধুনিক ভারতের প্রথম সর্বভারতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং এই সভার মধ্য দিয়েই সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিকাশ ঘটে ।
৫ ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাসের জাতীয়তাবাদী মূল্য বিচার করো ।
উঃআনন্দমঠ ‘ ( ১৮৮২ খ্রি . ) উপন্যাসে লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘ বন্দে মাতরম্ ‘ গানটির মধ্য দিয়ে বাঙালি সমাজকে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন ।
বিষয়বস্তু : ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাসের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে ঐতিহাসিক ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ও সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহের ক্ষীণ সূত্র ধরে অতীতের পটভূমিতে বঙ্কিম এক উজ্জ্বল ও জীবন্ত চিত্র তুলে ধরেন । স্বাদেশিকতা , আধ্যাত্মিকতা দেশোদ্ধারকারী সন্তান দলের প্রতিষ্ঠানের নামটিই আনন্দমঠ । এঁদের জীবনের মূলমন্ত্র ছিল , জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও গরিমাময় ।
মাতৃমূর্তি : সন্তানদলের প্রধান স্বামী সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে যে মাতৃমূর্তি দেখান , তার তিনটি রূপ , যেমন— ” মা যা ছিলেন ’ , ‘ মা যা হইয়াছেন ‘ এবং ‘ মা যা হইবেন ‘ । দ্বিতীয় মূর্তিটি মায়ের নগ্নিকা মুর্তি , ঔপনিবেশিক শাসনকালে যা রিক্ত ও নিঃস্ব , চারিদিকে শ্মশানের পরিবেশ ও মৃত্যুর হাহাকার ; তৃতীয় রূপটি হল ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে মা যে রূপটি ফিরে পাবেন , তা হল দশভূজা দুর্গার রূপ ।–
জাতীয়তাবাদের উদ্বোধন : জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ধর্মবোধকে জুড়ে দিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র, কারণ বাঙালির জাতীয়তাবাদের এক বড়ো অংশ জুড়েই ছিল ধর্ম । এই গ্রন্থে বঙ্কিম ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে জাতীয় জীবনের , জাতীয় জীবনের সঙ্গে রাষ্ট্র ও ধর্মের সমন্বয় সাধন করেছেন ।
দেশপ্রেমের বাণী : ‘ আনন্দমঠ ‘ – এর মাধ্যমে দেশপ্রেমের বাণী প্রকাশিত হয় । এটি স্বদেশপ্রেম , দেশমাতা আদর্শের ধারণার উদ্ভব ঘটায় , কারণ এই গ্রন্থে বলা হয়েছিল দেশমাতা হলেন মা , দেশপ্রেম হল ধর্ম এবং দেশসেবা হল পূজা ।
অভয়মন্ত্র : এই উপন্যাসে জন্মভূমিকে মাতৃরূপে কল্পনা করে রচিত ‘ বন্দে মাতরম্ ’ সঙ্গীতটি পরাধীন ভারতের বিপ্লবী মন্ত্র ও রণ সঙ্গীতে পরিণত হয় ।
আত্মত্যাগের আদর্শ : এই গ্রন্থটি দেশের যুবসম্প্রদায়কে স্বদেশ ভক্তি , ত্যাগ ও সেবাধর্মে উদ্বুদ্ধ করে স্বদেশ প্রেমের গীতারুপে চিহ্নিত হয়েছিল ।
পরিশেষে বলা যায় ভারতে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষে ‘ আনন্দমঠ ‘ ( ১৮৮২ খ্রি . ) ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ এক জাতীয়তাবাদী উপন্যাস , কারণ স্বদেশপ্রেম : বঙ্কিমচন্দ্র রচিত ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাস জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীর মনে স্বাদেশিকতা ও সশস্ত্র অভ্যুত্থানের ধারণা সঞ্চারিত করেছিল ।
৬ উনিশ শতকে লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবাদ কীভাবে ফুটে উঠেছে । এবং ঊনবিংশ শতকে রেখায় ও লেখায় জাতীয়তাবাদ কী ভাবে ফুটে উঠেছে ।
উঃ ঊনিশ শতকের শেষদিকে শিক্ষিত ভারতবাসীর চিন্তায় ও কর্মে এক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে । ব্রিটিশ শাসকদের আচার আচরণে জাতি বৈরিতা এবং অর্থনৈতিক – রাজনৈতিক অসাম্যের প্রতিবাদে ‘ আনন্দমঠ ‘ , ‘ বর্তমান ভারত ’ , ‘ গোরা ’ গ্রন্দ্বে ভারতমাতা চিত্রে এক জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারনার বিষয় ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয় ।
জাতীয়তাবাদী বিকাশে আনন্দমঠের ভূমিকা : একদিকে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে ( ১১৭৬ বঙ্গাব্দে ) বাংলার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ( ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ) ও অন্যদিকে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে এটি রচিত হয়েছে । এই উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে রয়েছে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদের চরিত্র যেমন — মহেন্দ্র , ভবানন্দ , সত্যানন্দ প্রমুখ । এটি ভারতকে মাতৃরূপে কল্পনা করে তার তিনটি রূপ দেখিয়েছে । যথা — জগদ্ধাত্রী , কালী , ও দশভূজা মূর্তি । এই উপন্যাসে সমকালীন ভারতবাসীর সামনে পরাধীন ভারতমাতার দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বঙ্কিম স্বৈরাচারী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতবাসীকে আহ্বান জানায় ।
বন্দেমাতরম সংগীত : এখানে বন্দেমাতরম সংগীতটি তুলে ধরা হয়েছে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে , যা ছিল পরাধীন ভারতের জাতীয় সংগীত তথা বিপ্লবীদের মন্ত্র । পরে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মাদাম ভিকাজি কামা রূপায়িত জাতীয় পতাকায় এই ধ্বনি স্থান পেয়েছে ।
জাতীয়তাবাদ বিকাশে বর্তমান ভারতের গুরুত্ব : ‘ বর্তমান ভারত ‘ গ্রন্থটি ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রসারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ।
i) স্বামীজি বর্তমান ভারতে বৈদিক যুগ থেকে ব্রিটিশ শাসনকাল পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন ।
ii) গ্রন্থটিতে স্বামীজি পরাধীনতার গ্লানির চিত্রটি তুলে ধরেছেন । ভারতবাসীকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন ।
iii) তিনি উপলব্ধি করেছিলেন স্বাধীনতা লাভের জন্য ভারতীয়দের মধ্যে ঐক্য খুবই প্রয়োজন ।
iv) তিনি সমাজের দলিত ও নিম্নশ্রেণির মানুষের প্রতি শোষণের তীব্র নিন্দা করেছেন । তার মতে , ভারতে প্রাচীনকাল থেকে শূদ্রদের দমিয়ে রাখা হয়েছে । এবার শূদ্রজাতির জাগরণ ঘটবে । তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে । তিনি দেশপ্রেমের আদর্শে ভারতবাসীকে দীক্ষিত করেছেন ।
জাতীয়তাবাদ বিকাশে ‘ গোরা ‘ উপন্যাসের ভূমিকা : বিংশ শতকের গোড়ায় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ । তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে ক্রমাগত জাতীয়তাবোধের আদর্শকে এক অন্য পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন । তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘ গোরা ‘ ১৯০৭-০৯ খ্রিস্টাব্দ অবধি ‘ প্রবাসী ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল । গোরা উপন্যাসটিকে সমগ্র আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যের একটি যুগান্তকারী রচনা হিসেবে গণ্য করা হয় । এখানে ‘ গোরা ‘ চরিত্রটি প্রবল ইংরেজ বিদ্বেষী । তাঁর বিদ্বেষকে আরও বাড়িয়ে তোলে ইংরেজদের ভারতীয় সভ্যতা , সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে তীব্র ঘৃণা ৷ গোরা প্রথমে উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রতি অনুরক্ত হয় কিন্তু পরবর্তীতে তার দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যায় । সে উগ্র হিন্দুত্ব তথা সকল প্রকার ধর্মীয় আচারবিচার বর্জন করে সংকল্প নেয় প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার উৎকর্ষ প্রচারের মাধ্যমে ভারতবাসীর মনে স্বদেশপ্রেমের জোয়ার আনবে । ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি ও আচারবিচারের পরিবর্তে স্বদেশপ্রেমের দ্বারাই যে জাতীয়তাবোধের জাগরণ সম্ভব তা সে উপলব্ধি করে এবং সেই কর্মযজ্ঞে সে নিজেকে উৎসর্গ করে ।
জাতীয়তাবাদ বিকাশে ‘ ভারতমাতা ’ ছবির গুরুত্ব :
সূচনা : ব্রিটিশ ভারতে বিভিন্ন চিত্রের মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর । ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে আঁকা তার ভারতমাতা চিত্রটি বিশ শতকে ভারতের জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ঘটিয়েছিল । এই চিত্রে তিনি ভারতের প্রতীক হিসেবে ভারতমাতাকে দেখিয়েছিলেন ।
স্বাদেশিকতা : ভারতমাতা চিত্রে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতমাতার হাতে থাকা বেদ , ধানের শিষ , যপের মালা ও শ্বেতবস্ত্রকে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন । আসলে এই চিত্রের স্বদেশবোধের দ্বারা তিনি জাতীয়তাবাদী ভাবনার প্রসার করতে চেয়েছিলেন ।
জাতীয় চেতনা বৃদ্ধি : সমকালীন ভারতে বিভিন্ন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মিছিলের সামনে ভারতমাতার চিত্র রাখা হতো , যার দ্বারা ভারতমাতাকে জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে দেখিয়ে ভারতে জাতীয় চেতনা বৃদ্ধি করা হয়েছিল বলে মনে করা হয় ।