ফাঁকি
রাজকিশোর পট্টনায়ক
১১ রাজকিশোর পট্টনায়ক কোন্ ভাষার লেখক?
উত্তর। রাজকিশোর পট্টনায়ক ওড়িয়া ভাষার লেখক।
১.২ তার লেখা দুটি গল্পের বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর। তার লেখা দুটি গল্পের বই হল ‘তুঠ পাথর’ এবং ‘ভড়াঘর’।
২, সন্ধিবিচ্ছেদ কর ; সন্দেহ, আষ্টেক, প্রত্যেক, সম্পূর্ণ, নিরপরাধ, দুর্বল।
উত্তর। সন্দেহ-সম্ + দেহ,
আষ্টেক—আষ্ট + এক,
প্রত্যেক—প্রতি + এক,
সম্পূর্ণ—সম্ + পূর্ণ,
নিরপরাধ—নিঃ + অপরাধ,
দুর্বল—দুঃ + বল।
৩, প্রতিশব্দ লিখে তা দিয়ে বাক্যরচনা কর :
বাড়ি, ছেলে, রাস্তা, পাথর, গাছ, বন্ধু, নদী।
উত্তর। বাড়ি—গৃহ—রমেশ বাবুর বসত গৃহ অজয় নদীর তীরে অবস্থিত।
ছেলে–পুত্র-পুত্র ও কন্যা সন্তানের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করা উচিত নয়।
রাস্তা—সড়ক—শীতকালে সড়কের পাশে থাকা গাছগুলির পাতা ধুলোয় ঢেকে গেছে।
পাথর—প্রস্তর–আদিম মানুষ প্রস্তরের হাতিয়ার ব্যবহার করত।
গাছ–বৃক্ষ-বৃক্ষ আমাদের নানা উপকার করে।
বন্ধু–মিত্র—তার বিবাহে পাত্র মিত্র সকলকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছে।
নদী—তটিনী—বর্ষায় তটিনী ফুলে ফেঁপে উঠেছে।
৪. নীচের বাক্যগুলি থেকে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া বেছে নিয়ে লেখো :
উত্তর। ৪.১ এটুকু জমি খালি রাখা যাক।
(সমাপিকা ক্রিয়া),
৪.২ আগে গাছ লাগাব।
(সমাপিকা ক্রিয়া)
৪.৩ কোদল লাগবে। বাইরের কোদল এসে ঘরে ঢুকবে।
(সমাপিকা ক্রিয়া), (সমাপিকা ক্রিয়া)
৪.৪ মায়ে পোয়ে ঘরের ভিতরে চলে গেল বিশেষ আলোচনার জন্য।
(অসমাপিকা ক্রিয়া) (সমাপিকা ক্রিয়া)
৪.৫ সকালে গোপাল আর গোপালের মা উঠে প্রথমেই গেল আমগাছ দেখতে, গাছ নেতিয়ে পড়েনি তো।
(অসমাপিকা ক্রিয়া) (সমাপিকা ক্রিয়া) (অসমাপিকা ক্রিয়া) (অসমাপিকা ক্রিয়া) (সমাপিকা ক্রিয়া)
৫। সকর্মক ও অকর্মক ক্রিয়া চিহ্নিত কর :
৫.১ বাবা আমগাছ নিয়ে পাচিলের কাছে লাগাচ্ছেন।
(সকর্মক ক্রিয়া)
৫.২ খুব হয়েছে মা আর ছেলের একই রকম বুদ্ধি।
(অকর্মক ক্রিয়া)
৫,৩ আপন চেষ্টাতেই গাছটি বেড়েছে।
(অকর্মক ক্রিয়া)
৫,৪ জল দেওয়া হল।
(সকর্মক ক্রিয়া)
৬. গল্প থেকে বেছে নিয়ে পাঁচটি অনুসর্গ লেখ। সেই অনুসর্গগুলি যোগে স্বাধীন বাক্যরচনা কর ।
দিয়ে, থেকে, হতে, সঙ্গে, জন্য।
উত্তর
দিয়ে – সে নিজের হাত দিয়ে প্রসাদ বিতরণ করল।
থেকে—মা ছাদ থেকে শুকনো জামা তুলে আনলেন।
হতে—সেখান হতে সে ট্রেনে যাত্রা করবে।
সঙ্গে— অসৎ ব্যক্তির সঙ্গে মিশতে নেই।
জন্য— তাড়াতাড়ি বাড়ি না ফিরলে মা আমার জন্য চিন্তা করবেন।
৭. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণ এবং বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্যে রূপান্তরিত কর :
জাহাজ, গাছ, পোষ, ঝড়, পশ্চিম।
উত্তর|
বিশেষ্য– বিশেষণ
জাহাজ-জাহাজী
ঝড়-ঝোড়ো
গাছ-গেছো।
পশ্চিম-পশ্চিমা
পোষ-পোষা
৮. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো :
৮.১ কটক কোন নদীর তীরে অবস্থিত? ওড়িশার আরও একটি নদীর নাম লেখ।
উত্তর। ওড়িশার কটক শহর মহানদীর তীরে অবস্থিত। ওড়িশার অপর একটি নদী হল মহানন্দা।
৮.২ গোপালের বাবা প্রথমে কেন বাগানে ফুলগাছ লাগাতে চাননি?
উত্তর। গোপালের কেনা জমি মাটি বেলে এবং তা ফুলগাছ লাগানোর পক্ষে অনুপযুক্ত। এছাড়াও সেখানে জল দেবার অসুবিধা থাকায় গোপালের বাবা প্রথমে বাগানে ফুলগাছ লাগাতে চাননি।
৮.৩ আমগাছে কেন ঠেকো দিতে হয়েছিল ?
উত্তর। যুদ্ধের সময় বোমার হাত থেকে বাঁচার জন্য ট্রেঞ্চ খোঁড়া হয়েছিল আমগাছটির গোড়া পর্যন্ত। গোঁড়া আলগা হয়ে যাওয়ার ফলে গাছটি দুর্বল হয়ে পরেছিল ও পূর্ব দিকে ঝুকে পড়ে। সেজন্যই আমগাছে ঠেকো দিতে হয়েছিল।
৮.৪ গাছটিকে উইয়ে খেয়ে ফেলল কীভাবে?
উত্তর। পিপড়ে মারার জন্য গাছের গোড়ায় গোপাল ওষুধ প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু গাছের গোড়ায় পিপড়ে ছিল না , ছিল উইপোকা।পিঁপড়ে না থাকার ফলে উইপোকা গাছটিকে খেয়ে ফেলেছিল।
৮.৫ গল্প অনুসারে কটকের খবরের কাগজে আমগাছটিকে নিয়ে কী সংবাদ বেরিয়েছিল?
উত্তর। কটক শহরে প্রচারিত সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল যে অর্ধরাত্রে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির ফলে শহরের মধ্যে পুরী ঘাটে আমগাছ উপড়ে পড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ আমগাছটির মত্যু সংবাদ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।
৯. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৯.১‘একটু জমি খালি রাখা যাক’–প্রস্তাবটি কে দিয়েছিলেন? কেন তিনি এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন?
উত্তর। রাজকিশোর পট্টনায়কের লেখা ‘ফাঁকি’ গল্প থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন গোপালের বাবা।
আটশো টাকা গুন্ঠ দরে জমি কিনে বাড়ি বানাবার সময় তিনি কিছু ফাঁকা জায়গা রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি খালি জায়গায় কিছু গাছপালা লাগাবার ইচ্ছা করেছিলেন।
৯.২ “গোপাল মুখ তুলে সন্ধিগ্ধভাবে বাবার মুখের দিকে তাকাল”—তার এই সন্দেহের কারণ কী?
উত্তর। গোপালের বাবা জানিয়েছিলেন যে তিনি বিরিবাটির বাগানে ল্যাংড়া আমের কলম করা একটি গাছ লাগিয়েছিলেন। সেই গাছটি কেমন ধরনের কলম, তা ভালো ভাবে নতুন জায়গায় সতেজভাবে হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে গোপাল তার বাবার মুখের দিকে তাকিয়েছিল।
৯.৩ “তুই করবি বাগান!”—বাবা কেন এমন মন্তব্য করেন?
উত্তর। বাগান করার জন্য তার পিছনে পরিশ্রম করার প্রয়োজন হয়। গোপালের বাবা তার পুত্রের আলস্যের ব্যাপারে সব কিছু জানেন। তাই বাগান করার প্রস্তাবে বাবা কিছুটা বিস্মিত হন। সে কোনোদিন নিজের হাতে জল তুলে স্নান পর্যন্ত করেনি তাই সেই বেলে মাটি যুক্ত অঞ্চলে ফুল গাছ লাগিয়ে রোজ তার পরিচর্চা করে গোপাল বাগান তৈরী করবে এই প্রসঙ্গেই তার বাবা এমন মন্তব্য করেন।
৯.৪ “গাছটাকে আর দু‘হাত ভিতরে লাগালে কত ভালো হত।”—কোন্ গাছ? কেন বক্তার এমন মনে হয়েছে?
উত্তর। এখানে গোপালের বাবার লাগানো কলমের আমগাছের কথা বলা হয়েছে।
এখানে বক্তা গোপালের এমন মনে হবার অনেকগুলি কারণ আছে। গাছ যখন বড়ো হবে তখন তার ডালপালা বাড়ির পাঁচিল অতিক্রম করে বাইরে চলে যাবে। তখন বাইরের ডালে হওয়া আম পাড়ার ছেলেরা সব পেড়ে নেবে। ফলে বাইরের প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঝগড়া হবার সম্ভাবনা বাড়বে। তাই তার মনে হয়েছে গাছটিকে আর একটু ভিতরের দিকে লাগালে ভালো হত।
৯.৫ আমগাছটি কীভাবে গোপালবাবুর বাড়ির নিশানা হয়ে উঠেছিল?
উত্তর। গোপালা বাবু যে অঞ্চলে থাকতেন সেখানে রুক্ষ পরিবেশের জন্য অধিক আমগাছ ছিল না। তাই এলাকার একক আমগাছটি গোপালবাবুর বাড়ির চেনার একটা নিশানা হয়ে উঠেছিল। যখন গোপালবাবুকে কেউ তার বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞাসা করত তখন তিনি তাদের বলতেন কাঠজোড়ি নদীর ধারে, পুরীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির পশ্চিমে পাঁচিলের মধ্যে আমগাছ থাকা বাড়িটাই তার বাড়ি।
৯.৬ গাছটি কীভাবে তাদের সাহায্য করেছিল বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর। গোপালবাবুর বাড়ির পাহারাদার রূপে আমগাছটি পরিচিত ছিল। যে তার সবুজ পাতার মাধ্যমে গ্রীষ্মের দাবদাহকে প্রতিরোধ করত। কাঠজোড়ি নদীর দিক থেকে ধেয়ে আসার বালির ঝাপটা যে তার দেহ দিয়ে প্রতিরোধ করত। গোপালের সমবয়সী বন্ধুরা সেই আমগাছতলায় বিশ্রাম নিত এবং গাছটির প্রশংসা করত। বিয়েবাড়ি, পুজো এবং অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় আমপাতা বা ডাল ছিড়ে নেওয়ার অত্যাচার সে চুপচাপ সহ্য করত।
৯.৭ আমগাছটিকে ঘিরে বাড়ির সকলের অনুভূতির প্রকাশ গল্পে কীভাবে লক্ষ করা যায় ?
উত্তর। গোপালবাবুদের বাড়ির আমগাছটিকে বাড়ীর এক সন্তানের মতই বেড়ে উঠেছিল। কেউ পাতার জন্য এলে কচিপাতা ভাঙতে নিষেধ করতেন। সকলেরই ভাবনা কবে আমগাছে আম হবে। আমগাছে যখন মুকুল এল তখন সকলের চিন্তা যদি কুয়াশার জন্য সব মুকুল ঝরে যায়। পরবর্তীকালে যখন আম ফলল তখন সকলে রোজ গুণে দেখে কতগুলি আম হয়েছে। দুপুরবেলা পালা করে পাহারা দিয়ে সকলে ছেলেদের থেকে আমগুলিকে রক্ষা করে। এমনিভাবে আমগাছটি বাড়ির প্রতিটি মানুষের আপনজন হয়ে উঠেছিল এবং সকলেই আমগাছটির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখত।
৯.৮ “সেই দিন থেকে গাছ হেলে পড়েছে পুরদিকে”—কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? গাছটি হেলে পড়ার কারণ কী?
উত্তর। আলোচ্য অংশে যুদ্ধের দিনের কথা বলা হয়েছে।
বোমার হাত থেকে বাচতে সরকার থেকে ট্রেঞ্চ কাটা হয় যা আমগাছটির গোড়া পর্যন্ত কাটা হয়েছিল। এঁর ফলে গাছের গোঁড়া আলগা হয়ে যাওয়ায় গাছটি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই গাছটি পূর্বদিকে হেলে পড়েছিল।
৯.৯ “ঠিক বন্ধুর মতই গাছ সব কথা লুকিয়ে রেখেছে।”—গাছটি কীভাবে গোপালের বন্ধু হয়ে উঠেছিল?
উত্তর। আমগাছটি পাতা ফল ও ছায়া দিয়ে অনেক উপকার করত,তাই সামান্য যত্নের বদলে সে গোপালের বন্দধু হয়ে উঠেছিল।
সময়ের ব্যবধানে আমগাছটি রাস্তার উপর অনেকটা ঝুঁকে পড়েছিল। পথচলতি মানুষজন আমগাছটির ওই অবস্থায় অসুবিধায় পড়ত। তাদের মাথায় আমগাছের ডালপালা লাগত। বৃষ্টি হবার পর পাতার জলে মানুষজনের শরীর ভিজে যেত। তাই গোপালের মা বার বার মানা করা স্বত্বেও সে আমগাছের কটি ছোট ডাল কেটে ফেলে। গাছ কিন্তু এই কথা কারও কাছে প্রকাশ করেনি বরং বন্দধুর মতই সেই ডাল কাটার চিহ্ন সে তার পাতার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিল।
৯.১০ বিভিন্ন ঋতুতে আমগাছটির যে ছবি গল্পে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা কর।
উত্তর। গ্রীষ্মকালে আমগাছটি গরম বাতাস এবং নদীর দিক থেকে আসা বালির ঝড়কে প্রতিরোধ করে। ক্লান্ত পথিকে ছায়া দিয়ে তাদের ক্লান্তি দূর করে। বর্ষার সময় গাছের পাতা বৃষ্টির জলে ভিজে যায় তখন বেনে বউ এসে গাছে বাসা বাধে। গাছের ফল সবুজ রঙ্গের আর কাটলে গেরি মাটির রঙ্গ দেখা যায়। বসন্ত কালে ঝড় থেকে সামলে উঠে গাছ মুকুলে ভরে ওঠে। পাখি আর কাঠ বিড়ালী তার ডালে ডালে খেলে আর বাসা বাধে।
৯.১১ গাছটি কীভাবে পরিবারের সকলকে ফাকি দিয়ে চলে গেল ?
উত্তর। আষাঢ় মাসের প্রবল ঝড় একদিন নিরীহ আমগাছটিকে শিকড় সহ উপড়ে দিল। গোড়ায় ট্রেঞ্চ খোড়ার ফলে গাছ দূর্বল হয়ে পূর্ব দিকে ঝুকে পড়েছিল। উইপোকার দল তার গোড়ার একটা দিককে খেয়ে পেলেছিল। ফলে নানা দিক থেকেই সে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।রাতের অন্ধকারে কারও ক্ষতিসাধন না করে আমগাছ অজস্র মানুষের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে ফাকি দিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হল। বাড়ীর লোক তাদের একজন নির্বাক কিন্তু উপকারী সদস্যকে হারাল।
Click Here To Download The Pdf
Sakura is not a tree