কী করে বুঝব
আশাপূর্ণা দেবী
বিষয়সংক্ষেপ
ছ-বছরের বুকু তাদের বাড়ির বাইরের উঁচু চাতালে খেলা করছিল। এমন সময় একটি রিকশা এসে থামে তাদের বাড়ির সামনে। রিকশা থেকে দুজন বেশ স্বাস্থ্যবতী মহিলা এবং একটি বুকুরই বয়সি মোটা ছেলে নেমে তাদের বাড়িতে আসে। তারা বুকুকে জিজ্ঞাসা করে, তার মা বাড়িতে আছে কি না এবং তাকে খবর দিতে বলে যে, উত্তরপাড়া থেকে ছেনু মাসিরা এসেছেন। মা সে খবর শুনে খুব রেগে গেলেন এবং বিরূপ মন্তব্যও করে বসলেন। অথচ বাইরে এসে খুব আনন্দের সঙ্গে তাঁদের অভ্যর্থনা জানাতে লাগলেন। বুকু আর চুপ করে না-থেকে মায়ের বিরূপ মন্তব্যগুলি অতিথিদের সামনে প্রকাশ করে দিল। ছেনু মাসিদের সঙ্গে আসা ছেলেটি আলমারি ভেঙে বই বের করে ছড়ালে তাকেও বেশ কয়েকটি কথা শুনিয়ে দেয় বুকু। বাবা অফিস থেকে ফিরে অতিথিদের সম্পর্কে কী মন্তব্য করেছেন, তাও বুকু সবাইকে জানিয়ে দেয়। মা নানাভাবে তাকে থামানোর চেষ্টা করলেও বুকু থামেনি। আসলে বুকুর মা আজই তাকে বারবার করে শিখিয়েছে, সর্বদা সত্য কথা বলতে হয় এবং কোনো কিছু গোপন করতে নেই। অথচ তার সামনে সত্য-মিথ্যা দুটি ঘটনাই ঘটে চলেছে। তাই সে সব সত্য কথাগুলিকে বলে চলেছে। অতিথিরা চলে গেলে মা ও বাবা তাকে বেদম প্রহার করতে থাকলে সে এক সময় ডুকরে কেঁদে উঠে বলে মা তাকে সত্য কথা বলতে শিখিয়েছে। সে কী করে বুঝবে, যে “আসলে কী করতে হবে?” আসলে বড়দের তৈরী করা ন্যায় ও অন্যায়ের জটিল নিয়ম বুকু বুঝতে পারে নি, তাই অপ্রিয় সত্য কথা বলে সে বিরাগের পাত্র হয়ে উঠেছে।
হাতেকলমে
১.১ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম হল ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ ও ‘সুবর্ণলতা।
১.২ আশাপূর্ণা দেবী তাঁর সাহিত্যকৃতির জন্য কোন কোন্ বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন ?
উঃ আশাপূর্ণা দেবী তাঁর সাহিত্যকৃতির জন্য ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’, ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’, ‘লীলা পুরস্কার’ ও ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন।
২ একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ বুকু কোথায় বসে খেলা করছিল ?
উঃ বুকু বাড়ির বাইরের রোয়াকে বসে খেলা করছিল
২.২ রিকশা থেকে কারা নামলেন ?
উঃ রিকশা থেকে নামলেন দুটি বেজায় মোটাসোটা ভদ্রমহিলা আর বুকুর বয়সেরই একটি ছেলে সম্পর্কে তাঁরা বুকুর মায়ের ছেনুমাসি, বেনুমাসি এবং বেনুমাসির ছেলে ডাম্বল।
২.৩ ডাম্বল আলমারি ভেঙে কার বই নামিয়েছিল ?
উঃ ডাম্বল আলমারি ভেঙে বুকুর সেজোকাকার বই নামিয়েছিল।
২.৪ বুকুর মা–র কী কেনা ছিল ?
উঃ বুকুর মার সিনেমার টিকিট কেনা ছিল।
২.৫ বুকু আর বুকুর সেজো খুড়িমা অতিথিদের জন্যে কী কী খাবার নিয়ে আসে ?
উঃ বুকু আর বুকুর সেজো খুড়িমা অতিথিদের জন্য বড়ো বড়ো রাজভোগ, ভালো ভালো সন্দেশ, শিঙাড়া, নিমকি আর চা নিয়ে আসে।
২.৬ বুকু কোন্ স্কুলে ভরতি হয়েছিল
উঃ বুকু ‘আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভরতি হয়েছিল।
৩ নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
৩.১ বুকু খেলতে খেলতে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় কেন ?
উঃ বুকু তাদের বাড়ির বাইরের সামনের চাতালে বসে খেলা করছিল। হঠাৎ তাদের বাড়ির সামনে একটি রিকশা এসে থামে। বুকু দ্যাখে, সেই রিকশা থেকে দুজন খুব মোটাসোটা মহিলা এবং তাদের সঙ্গে বুকুর মত বয়সেরই একটি মোটা ছেলে নামল। বুকু এত স্বাস্থ্যবতী মহিলা আগে কখনও দেখেনি। তাছাড়া সে অবাক হয়ে ভাবছিল এই তিনজন মোটা মানুষ কীভাবে রিক্সার খোলের মধ্যে জায়গা পেয়ে বসতে পেরেছিলো। অদৃশ্যপূর্ব অদ্ভুতদর্শন মানুষগুলিকে দেখে ও তাদের সেই রিক্সার থেকে নামতে দেখে সে খেলতে খেলতে তাকিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিল।
৩.২। সিঁড়ি ভেঙে আর উঠতে পারব না বাবা’ –কারা একথা বলেছেন ? তাঁরা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে পারবেন না কেন ?
উঃ আশাপূর্ণা দেবী রচিত “কী করে বুঝব’ গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটি বুকুদের বাড়িতে উত্তরপাড়া থেকে বেড়াতে আসা বুকুর মায়ের পাতানো ছেনুমাসি ও বেণুমাসি বলেছেন।
শারীরিকভাবে খুব মোটাসোটা বা ভারিক্কি ধরনের হওয়ায় সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠা তাঁদের পক্ষে খুব কষ্টসাধ্য। তা ছাড়া তাঁরা অনেক পথ কষ্ট করে এসেছেন। বিশেষ করে দু-তিন বার বাস বদল করে শেষে রিকশা করে তাঁরা এখানে এসে পৌঁছেছেন। ফলে তাঁরা খুবই পরিশ্রান্ত। এ কারণে তারা সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে পারবেন না।
৩.৩ ‘ও কী! কী কাণ্ড করেছ তুমি’-কে, কী কাণ্ড করেছে ?
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর রচিত ‘কী করে বুঝব’ গল্প থেকে গৃহীত উধৃতাংশটিতে বুকুদের বাড়িতে বেড়াতে আসা তারই বয়সি ছেলে ডাম্বল কাণ্ডটি করেছে। বুকুদের বাড়ির একটি ঘরের দেয়ালে সাঁটিয়ে রাখা বইয়ের আলমারিটার একটি পাল্লা ধরে ডাম্বল এমন জোরে হ্যাচকা টান মেরেছে যে, চাবি বন্ধ কলটি বন্ধ অবস্থাতেই পাল্লার সঙ্গে খুলে বেরিয়ে এসেছে। তারপর, সেখানে সাজানো বইগুলি থেকে একসঙ্গে তিন-চারটি বই নামিয়ে-তাতে ছবি নেই বলে ঘৃণাভরে সেগুলিকে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। তাই বুকু তার এই দুষ্টুমিকে ভয়ানক কান্ড বলেছে।
৩.৪ বুকু অবাক হয়ে ফ্যালফ্যালিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েছিল কেন ?
উঃ উত্তরপাড়া থেকে ছেনুমাসিদের আসার খবরটি বুকু যখন তার মাকে দেয়, তখন তার মা শুনে খুব বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, অসময়ে লোকজনের বাড়িতে আসাকে তিনি একদম পছন্দ করেন না। কিন্তু আবার তাঁদের সামনে এসে তিনিই আনন্দে হইহই করে আপ্যায়ন শুরু করেন। শুধু তাই নয়, কিছুটা অভিমানের সুরে তাঁদের অনেক দিন না-আসার জন্য অনুযোগ জানান। মায়ের এই দুরকম আচরণের ব্যাপারটি ছোট্ট বুকুর মাথায় ঢোকেনি। একারণেই বুকু অবাক হয়ে ফ্যালফেলিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েছিল।
৩.৫“ছেলের কথা শুনেই বুকুর মা–র মাথায় বজ্রাঘাত” “ছেলের কথা শুনে বুকুর মা–র মাথায় বজ্রাঘাত হল কেন ?
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘কী করে বুঝব’ গল্পে বুকুর মুখে উত্তরপাড়া থেকে ছেনু মাসিরা এসেছেন শুনে বুকুর মা বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। বলেছিলেন, অসময়ে বাড়িতে লোকের বেড়াতে আসা তিনি একদম পছন্দ করেন না। কিন্তু অতিথিদের সামনে এসে তিনি ভীষণ আনন্দের সঙ্গে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান এবং এতদিন আসেননি। কেন তা নিয়ে অভিমান প্রকাশ করতে থাকেন। মায়ের এই পরিবর্তন দেখে বুকু হঠাৎ সবার সামনে সত্য প্রকাশ করে মায়ের কাছে জানতে চায় যে মা কেনো তখন তাদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। এইভাবে অপ্রিয় সত্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার অতিথিদের সামনে লজ্জায়, অপমানে তার মায়ের মাথায় যেন বজ্রাঘাত হয়।
৩.৬ ডাম্বলকে ইস্কুলে ভরতি করা হয়নি কেন ?
উঃ ডাম্বলকে ইস্কুলে ভরতি না-করানোর কারণস্বরূপ ডাম্বল জানায় তার বাবা অতিশয় কৃপণ ব্যক্তি। ডাম্বলের বয়স সাত বছর। সুতরাং, সাত বছরের ছেলের স্কুলের বেতন সাত টাকা। এই সাত টাকা তাঁর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় বলে তিনি বলেছেন, ডাম্বলের পড়াশোনার প্রয়োজন নেই। সে বরং চাষবাস করে খাবে।
৩.৭ কে জানে পাগলা–টাগলা হয়ে যাবে নাকি’ –কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করা হয়েছে ? এমন সন্দেহের কারণ কী ?
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা “কী করে বুঝব’ গল্পের প্রধান চরিত্র বুকুর সম্পর্কে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
বুকুর বাড়িতে বেড়াতে আসা বেণুমাসি, ছেনুমাসির আগমনে বুকুর মা খুশি হননি। বুকুর মা অখুশি হয়ে অতিথিদের আড়ালে যে কথাগুলো বলেছিলেন বুকু সেই কথাগুলোই নির্বিকারে অতিথিদের সামনে বলে ফেলে। যা অপদস্থ করে বুকুর মাকে। পাশাপাশি ডাম্বলকে বুকু তার শরীর ও বুদ্ধি নিয়ে যে কথাগুলো বলেছিলো তা বেণুমাসি সুযোগ বুঝে বুকুর মাকে বলায়, সবার সামনে নিজের সম্মান ধুলোয় মিশে যাচ্ছে দেখে বুকুর মা ব্যাপারটি সামলানোর চেষ্টা করেন। সংশয় ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বুকুর মাথা ঠিক আছে কিনা এসব প্রসঙ্গ তুলেও তিনি লোকলজ্জার হাত থেকে বাঁচতে বুকুকে ‘পাগলা’ বলে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করেন।
৩.৮ ‘দুজনে মিলে চেঁচান, বল, বল কেন ওসব বললি ? — বুকু কেন ওসব বলেছিল ?
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘কী করে বুঝব’ গল্পের শেষে দেখা যায়, প্রবল অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে চরম অপমানিত হয়ে বেনুমাসি, ছেনুমাসি ও ডাম্বল চলে যায়। এর জন্য স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করে বুকুর অকপট সত্যি কথা বলাই ছিল প্রধান কারণ। অথচ, বুকুর মা দুপুরবেলাতে বুকুকে পইপই করে বুঝিয়েছিল—সর্বদা সত্য কথা বলতে হবে এবং কোনো অবস্থায় কারও কাছে কিছু লুকোনো যাবে না। তাই, মাথায় মায়ের সদ্য শেখানো কথাগুলি ঘুরপাক খাচ্ছিল। ফলে সে সেই মতো আচরণ করতে শুরু করে। অর্থাৎ সরল, স্বাভাবিক ছয় বছরের শিশু বুকুর পক্ষে স্থানকাল-পাত্র বিবেচনা করে কথা বলার দক্ষতা গড়ে ওঠেনি বলেই সে এমন ব্যবহার করেছিল।
8 নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষার উত্তর দাও :
৪.১ গল্পে বুকুর আচরণ তাঁর মাকে অতিথিদের সামনে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। বুকুর এই আচরণ কি তুমি সমর্থন কর ? বুকু কেন অমন আচরণ অতিথিদের সামনে করেছিল ?
উঃ বুকুর এই আচরণকে পুরোপুরি সমর্থন করা যায় না। উপযাজক হয়ে অতিথিদেরকে সে কথাগুলি না শোনাতেই পারত। বিশেষ করে যে কথাগুলি সঙ্গে পিতা-মাতার সম্মান জড়িয়ে আছে, তা প্রকাশ করা সন্তানের পক্ষে উচিত নয়। কিন্তু যেহেতু সে ছ-বছরের ছোট্ট ছেলে তাই তার এই আচরণকে খুব অপরাধ বলে ভাবা যাবে না। তা ছাড়াও তার পিতামাতারও তার সম্মুখে অন্যের ব্যাপারে বিরূপ মুন্তব্য করা উচিত ছিল না।
বুকুকে দুপুরবেলা তার মা একশোবার ধরে বুঝিয়েছে, সব সময় সত্য কথা বলতে হবে এবং কারও কাছে কোনো কিছু গোপন করা উচিত নয়। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী কোথায় কেমন আচরণ করা উচিত তিনি তার শিক্ষা দেননি। কিন্তু ঘটনাচক্রে সেদিনই বাড়িতে অতিথি আসে এবং তাঁর মা ঘরে-বাইরে দু-রকম মন্তব্য করে বসেন। ফলে সদ্য শেখা শিক্ষাটিকে একটু প্রয়োগ করে দেখতে গিয়েই বুকু এই সমস্যার সৃষ্টি করে ফেলে।
৪.২। বাড়িতে অতিথি এলে তাঁদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত সে সম্পর্কে বন্ধুকে একটি চিঠি লেখ।
উঃ নিজের মতো করে লিখবে।
৪.৩। কী করে বুঝব, আসলে কী করতে হবে’– গল্পে বুকু এই কথা বলেছিল।আসলে কী করা উচিত বলে তোমার মনে হয় ?
উঃ বুকু মা-বাবার কাছে প্রচণ্ড মারধর খেয়ে শেষে বলতে বাধ্য হয়েছিল—“কী করে বুঝব, আসলে কী করতে হবে?” আসলে সে বুঝতেই পারেনি, তার সদ্য শেখা শিক্ষার প্রয়োগের ফলে এই পরিণাম হবে। বুকুর উচিত ছিল, মায়ের বকুনি খেয়ে বিষয়টিকে চেপে যাওয়া। অতিথিদের সামনে অপ্রিয় সত্য কথাগুলি তার বলা উচিত হয়নি। অতিথিরা চলে যাওয়ার পর সে মাকে জিজ্ঞাসা করতে পারত কেন তিনি ঘরে এবং বাইরে দু-রকম কথা ও আচরণ করলেন। তার উচিত ছিল, বড়োদের কথার মধ্যে কথা না-বলা।
৪.৪ গল্পে দুটি ছোটো ছেলের কথা পড়লে বুকু আর ডাম্বল। দুজনের প্রকৃতিগত মিল বা অমিল নিজের ভাষায় লেখ।
উঃ বুকু আর ডাম্বলের মধ্যে মিল হল—(১) দুজনেই স্পষ্টবাদী।
(২) দুজনেই ঘরের গোপন কথাকে বাইরে প্রকাশ করেছে।
তবে দুজনের মধ্যে অমিলও লক্ষ করা যায় (১) বুকু ডাম্বলের মতো দুরন্ত নয়। বুকু আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভরতি হয়েছে। সেখানে সে পড়াশোনা করে। অন্যদিকে, ডাম্বল দুরন্ত প্রকৃতির এবং সে কোনো স্কুলে ভরতি হয়নি। ফলে সে পড়াশোনা করে না।(২) ডাম্বল জানে, বই মানে তাতে ছবি থাকতে হবে। কিন্তু বুকু জানে, কোন বইতে ছবি থাকে এবং কোন বইতে ছবি থাকে না। (৩) বুকুর মুখে তাদের সম্পর্কে কী কী নিন্দে হতে পারে, সেসব কথা শুনে ডাম্বল বুকুকে ঘুসি মারতে এগিয়ে যায় অর্থাৎ তার এই আচরণে রাগ-ক্রোধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণতার বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। এই ধরনের আচরণ বুকুর মধ্যে একেবারেই অনুপস্থিত।(৪) বুকু তার সেজো কাকার বইয়ের সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন এবং সে ডাম্বলের মতো জিনিসপত্র ভেঙ্গে ছড়িয়ে নষ্ট করে না।
৪.৫ গল্পটি পড়ে বুকুর প্রতি তােমার সহানুভূতির কথা ব্যক্ত করে একটি অনুচ্ছেদ রচনা কর।
উঃ অন্নপূর্ণা দেবীর লেখা কী করে বুঝব’ পাঠ্যাংশটি পড়ে বুকুর প্রতি আমাদের মায়া হয়। ছোট্ট ছেলেটি অতিরিক্ত স্পষ্টবাদী বা সত্যবাদী হতে গিয়েই বাবা-মায়ের কাছে প্রচণ্ড মার খায়। বয়সে ছোটো হওয়ায় তার মনের মধ্যে বাস্তবের জটিল মারপ্যাচ এখনও তৈরি হয়নি। সে জানত না কোথায়, কখন, কোন কথা বলতে হবে। তার মা তাকে শিখিয়েছিলেন—সর্বদা সত্য কথা বলতে হবে এবং কোথাও কিছু গোপন করা যাবে না। কিন্তু তারপরই তিনি বুকুর সামনে অপরের নামে নিন্দা করেন সুতরাং, যখনই সে দেখল তার মা ঘরে এক রকম বলছেন, অথচ বাইরে অতিথিদের সামনে আর-এক রকম কথা বলছেন তখনই তার মনে হল সত্য কথা বলা উচিত এবং কোনো কিছু গোপন করা উচিত নয়। ফলে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে যায় তার আচরণে। গল্পের শেষে বুকুর পরিণতির কথা পড়ে তার প্রতি আমাদের মনে সমবেদনা জাগে।
৫ একই অর্থযুক্ত শব্দ গল্প থেকে খুঁজে নিয়ে লেখ : সংবাদ, পুস্তক, সন্তুষ্ট, কোমল, আপ্যায়ন।
সংবাদ = খবর।
পুস্তক = বই।
সন্তুষ্ট =খুশি।
কোমল = মোলায়েম।
আপ্যায়ন = অভ্যর্থনা।
৬ নীচের শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ কর : ইত্যবসরে, বজ্রাঘাত, ব্যাকুল, নিশ্চয়, রান্না, দুরন্ত, সন্দেশ।
ইত্যবসরে = ইতি + অবসরে।
বজ্রাঘাত = বজ্র + আঘাত।
ব্যাকুল = বি + আকুল।
নিশ্চয় = নিঃ + চয়।
রান্না =রাঁধ + না।
দুরন্ত = দুঃ + অন্ত।
সন্দেশ = সম্ + দেশ।
৭ নীচের শব্দগুলির কোনটি বিশেষ্য এবং কোনটি বিশেষণ খুঁজে নিয়ে লেখ। এরপর বিশেষ্যগুলির বিশেষণের রূপ এবং বিশেষণগুলির বিশেষ্যের রূপ লেখ : মন, শিক্ষা, অবস্থা, গম্ভীর, শাসন, শয়তান, লাল, সর্বনেশে, ঘর, সুন্দর, দুরন্ত, মুখ, কথা, হ্যাংলা।
মন (বিশেষ্য ) ⟶ মানসিক (বিশেষণ)
শিক্ষা (বিশেষ্য) ⟶ শিক্ষিত (বিশেষণ)
অবস্থা (বিশেষ্য) ⟶ অবস্থিত ( বিশেষণ)
গম্ভীর (বিশেষণ) ⟶ গাম্ভীর্য (বিশেষ্য)
শাসন (বিশেষ্য) ⟶ শাসিত (বিশেষণ)
শয়তান(বিশেষ্য) ⟶ শয়তানি(বিশেষণ)
লাল (বিশেষ্য) ⟶ লালচে(বিশেষণ)
সর্বনেশে (বিশেষণ) ⟶ সর্বনাশ(বিশেষ্য)
ঘর (বিশেষ্য) ⟶ ঘরোয়া(বিশেষণ)
সুন্দর (বিশেষণ) ⟶ সৌন্দর্য(বিশেষ্য)
দুরন্ত(বিশেষণ) ⟶ দুরন্তপনা(বিশেষ্য)
মুখ (বিশেষ্য) ⟶ মৌখিক( বিশেষণ)
কথা (বিশেষ্য) ⟶ কথিত(বিশেষণ)
হ্যাংলা (বিশেষণ) ⟶ হ্যাংলামি(বিশেষ্য)
৮ নীচের প্রতিটি উপসর্গ দিয়ে পাঁচটি করে নতুন শব্দ তৈরি করে লেখ : অ, বি, বে, আ, প্র, অব।
অ = অজয়, অচল, অলক, অমর, অবেলা।
বি = বিহার, বিজয়, বিচার, বিবেক, বিমাতা।
বে = বেরসিক, বেচাল, বেইমান, বেবাক, বেসামাল।
আ = আবাদ, আগমন, আজীবন, আলুনি, আজন্ম।
প্র = প্রশান্ত, প্রতাপ, প্রভাত; প্রচুর; প্রদীপ।
অব = অবদান, অবকাশ, অবধান, অবতার, অবশ।
৯ সমোচ্চারিত/প্রায় সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দগুলির অর্থ লিখে আলাদা আলাদা বাক্য রচনা কর : আসা, আশা । সোনা ,শোনা । হাড় , হার । মার, মাড় । মাস , মাষ । জ্বালা , জালা ।
আসা = (আগমন)—আপনার আসার খবর আমরা আগেই পেয়েছি।
আশা = (আকাঙ্ক্ষা)—মানুষের মনের আশার শেষ নেই।
সোনা = (সুবর্ণ)— মেয়েরা সোনার গহনা পরতে খুব ভালোবাসে।
শোনা = (শ্রবণ করা)— অবসর সময়ে গান শোনা আমার একটি পছন্দের কাজ।
হাড় = (অস্থি)—আজ ফুটবল খেলার সময় রমেনের পায়ের হাড় ভেঙেছে।
হার = (পরাজিত হওয়া)- আজকের ক্রিকেট খেলায় আমাদের বিদ্যালয়ের হার হয়েছে।
মার = (প্রহার)—চোরটিকে মারতেই সে সত্য স্বীকার করল।
মাড় = (ভাতের ফ্যান) — মাড় গোরুদের একটি প্রিয় পানীয়।
মাস = (ত্রিশ দিন)—আশ্বিন মাসের মেঘ দেখলেই বোঝা যায় পুজো এসে গেছে।
মাষ = (ডাল শস্য বিশেষ)—মাষ-কলাই খুবই পুষ্টিকর খাদ্য।
জ্বালা =(যন্ত্রণা অর্থে)—আগুনে হাতটা পুড়ে গিয়ে খুব জ্বালা করছে।
জালা = (মাটির বডো পাত্র)—গরমের দিনে জালায় জল রাখলে তা খুব ঠান্ডা থাকে।
১০ (এই গল্পে অজস্র শব্দদ্বৈত ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দগুলি গল্প থেকে খুঁজে নিয়ে লেখ : (দুটি শব্দ খুঁজে দেওয়া হল) খুকখুক, তোড়জোড়।
উঃ হাসতে হাসতে; হাঁপাতে, হাঁপাতে , , ড্যাব ড্যাব, গমগম, মুছতে মুছতে; হই হই, ছেণু-বেণু, চালতা চালতা, গাদা গাদা, রুটি-টুটি, পড়তে উড়তে, পাকা পাকা, চাষ বাস, কাঁদো কাঁদো, ভাজা ভাজা, পাগলা টাগলা, পিছন পিছন, ঝন ঝন, হা হা, বেছে বেছে, হায় হায়, শুধু শুধু। হালকা হালকা
১১ নীচের বাক্যগুলি থেকে সংখ্যাবাচক/পূরণবাচক শব্দ খুঁজে বার কর :
১১.১ মা তো সেই তিনতলার ছাতে।
উঃতিন-সংখ্যাবাচক শব্দ।
১১.২ দুই বোনের দুই–দু–গুণে চারটি চোখ কপালে উঠে গেছে।
ঊঃদুই, চার-সংখ্যাবাচক শব্দ
১১.৩ সাত বছরের ছেলের স্কুলের মাইনে সাত টাকা।
উঃসাত-সংখ্যাবাচক শব্দ।
১১.৪ নিজেই তো দুপুরবেলা একশো বার করে বললে সবসময় সত্যি কথা বলবি।
ঊঃএকশো—সংখ্যাবাচক শব্দ।
১২ নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন কর :
১২.১ বুকু ছুটে ওপরে চলে যায়। (জটিল বাক্যে)
উঃ বুকু নামের যে ছেলে সে ছুটে উপরে চলে যায় ।
১২.২ ছেনুমাসি আর অন্যটির নাম বেণুমাসি। (সরল বাক্যে)
উঃ ছেনুমাসির মতো অন্যটির নাম বেণুমাসি ।
১২.৩ যত বড়ো হচ্ছে তত যেন যা–তা হয়ে যাচ্ছে। । (যৌগিক বাক্যে)
উঃ বড়ো হচ্ছে এবং যা-তা হয়ে যাচ্ছে।
১২.৪ ছেলের কথা শুনেই বুকুর মার মাথায় বজ্রাঘাত। (জটিল বাক্যে)
উঃ ছেলের যা কথা তা শুনেই বুকুর মা-র মাথায় বজ্রাঘাত।
১৩ পাকা, মাথা—এই শব্দগুলির প্রত্যেকটিকে দুটি আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্য লেখ:
পাকা = (পক্ক)-গাছের আমগুলো সব পেকে লাল হয়ে উঠেছে
পাকা = (পিচ, সিমেন্ট বা ইট বাঁধানো রাস্তা)-রহিম পাকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।
মাথা = (বুদ্ধি)— অঙ্কে তার মাথা ভালো নয়।
মাথা = (মগ ডালে) — কমল আম পাড়তে গাছের মাথায় উঠেছে।
Click Here To Download The PDF
Nice Book